শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে লোকালয়ে

আইয়ুব খান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  ২৬ জুলাই ২০২১, ২০:৪৩

পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ার চর গ্রামে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার ও ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয়দের উদ্যোগে ৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করা হয়েছিল।

জানা গেছে, বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কার না করায় সেখানকার স্থানীয়রা চাষাবাদের জন্য বাঁধটি সংস্কার করে। এলাকাবাসীর ৬০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে ২ কিলোমিটার এবং ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদ খান রাজের ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ১ কিলোমিটার মোট ৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করেন। গত রোববার দুপুরে সংস্কারকৃত বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ণিমার তিথি এবং লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন, দক্ষিণ চরমোন্তাজ, নয়ারচর, চরআন্ডা ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকেছে।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ছোবলে ওই চার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। এছাড়া চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের বাঁধ অনেক আগ থেকেই ভেঙে আছে। এ বাঁধগুলো সংস্কার না করায় জোয়ারের পানি বাড়লেই আতঙ্ক বাড়ে সেখানকার মানুষের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়া কার্যালয় থেকে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে উপজেলার চালিতাবুনিয়া, চরলতা, গাইয়াপাড়া, কোড়ালিয়া, চরমোন্তাজ, চরবেষ্টিনসহ কয়েকটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অরক্ষিত ওই ছয় গ্রামের মধ্যে পাঁচ গ্রামের পোল্ডারের অভ্যন্তরে জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকাতে জরুরি আপৎকালীন পদক্ষেপ নিয়েছে পাউবো। যেখানে বাঁধের ক্ষতি হয়েছে, সেখানে সংস্কার এবং যেখানে বিলীন হয়েছে, সেখানে পুনর্নির্মাণের কাজ করা হয়। তবে উপজেলার ১৪ কিলোমিটার ভাঙা বাঁধের আপৎকালীন জরুরি ৩ কিলোমিটার সংস্কার করা হয়েছে। এখনো ১১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার বাকি আছে ।

উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, সাবেক সহ-সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর এবং চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সন্তান, ওয়াহিদ খান রাজ বলেন, আমি আমার নিজ অর্থে ১ কিলোমিটার এবং এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আরও ২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করেছিলাম।

তবে পূর্ণিমার তিথি এবং লঘুচাপের প্রভাবে রোববার সংস্কারকৃত বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে চাষাবাদের জন্য ধান রোপণ করা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নয়ারচর গ্রামের কৃষক কামরুল শিকদার বলেন, ওয়াহিদ খান রাজের উদ্যোগে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাঁধ সংস্কার করায় আমরা চাষাবাদ করতে পারব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সেই বাঁধ ভাঙার কারণে আমার ক্ষেতের ধানের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে । শুধু আমার না এখানকার প্রায় ২০ জনের ক্ষেতের ধানের চারা পানিতে তলিয়ে আছে। এখন ধান চাষের সময় এখন চাষ না করতে পারলে আমরা কী খাব। বাঁধ সংস্কার না হলে নয়ার চর গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়বে এবং অনাবাদি থাকবে প্রায় দুশ একর জমি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, 'নদী-সাগর ঘেরা রাঙ্গাবালীর ভাঙা কয়েকটি বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ইতোমধ্যে । এখনো কয়েকটি এলাকার বাঁধ ভেঙে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওইসব বাঁধ পরিদর্শন করেছে। আশা করছি, খুব দ্রুত বাঁধগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবল মেহেরাজ বলেন, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ার চর গ্রামের বেড়িবাঁধের কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে, সিডিউল হয়ে গেছে। ইয়াসের যেসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবগুলোর কাজ চলছে ঈদের কারণে কিছুদিন বন্ধ ছিল। আজ থেকে আবার কাজ শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব জানান, ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গাবালীর বাঁধগুলো তিনি পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর তারা গিয়ে ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত শুরু করে।’

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে