এক অচেনা রেলস্টেশন শায়েস্তাগঞ্জ!

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০২১, ১২:২২

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ ( হবিগঞ্জ)

 

 

 

সারাদেশের ন্যায় করোনার সংক্রমণ রোধে মানুষদেরকে ঘরে রাখার চেষ্টায় শায়েস্তাগঞ্জেও  পালিত হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এই লকডাউনে বন্ধ রয়েছে দূর পাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন। সেই সাথে  দীর্ঘদিন যাবত করোনার প্রভাবে  যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন  রেলপথ। কেবল ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষদের সুবিধার জন্য কয়েকদিন চালু ছিল আন্তঃনগর ট্রেন।

 

ঈদুল আজহার পর একদিন চালু থেকে আবারও সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে  সন্ধ্যা হলেই শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনে পা ফেলার ফুরসৎ মিলত না। আন্তঃ নগর ট্রেনগুলোর স্টপিজে ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দ আর নানান পেশার হকারদের আনাগোনায় উৎসব মুখর হয়ে উঠত শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন।  কিন্তু সেখানে এখন কেবলই সুনসান নীরবতা। 

 

সরজমিনে সোমবার ( ২৬ জুলাই) রাতে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্লাটফর্মের সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। একই সাথে বন্ধ রয়েছে রেলস্টেশনের প্রবেশ পথ। স্টেশনে যাত্রীদের বসার চেয়ারগুলো উল্টো করে রাখা হয়েছে। যাত্রীদের চলাচলের রাস্তা দিয়ে কুকুরও ক্ষুধায় ঘেউ ঘেউ করে দৌড়াচ্ছে। যেহেতু ট্রেন চলেনা তাই, রেলস্টেশনের দ্বায়িত্বরতও এখানে কেউ নেই। রেলওয়ে ফাড়িতে কর্তব্যরত পুলিশ ডিউটি পালন করছেন না। স্টেশনে বাদাম বিক্রেতা বা ঝালমুড়ি ওয়ালারাও নেই।  স্টেশনের দুইপাশেই জ্বলছে আলো, নিরব সন্ধ্যায় রেললাইনের মধ্যেখানে মানুষের নেই আনাগোনা।  দীর্ঘদিন ধরে রেল ক্রসিংয়ের মাঝখানে পথচারীদের চলাফেরা না থাকায় ঘাসগুলো বেশ বেড়ে উঠেছে। এইসব ঘাসে রাতের বেলা ও উন্মুক্ত চড়ে বেড়াচ্ছে কিছু ছাগল আর ভেড়াগুলো।  এই মৃদু আলোতেই যেন পুরো শায়েস্তাগঞ্জের নিরবতার চিত্র ফুটে উঠেছে।  সন্ধ্যার পরে কোথাও কোথাও দুই একজন হাটতে বের হয়েছেন। স্টেশনের ফুটব্রীজে নেই আগেরমত আড্ডা, এখানেও আশেপাশে কেউ নেই।

 

স্থানীয় একজন পান দোকানদার চেরাগ আলী জানান, ট্রেন না আসায় তাদের জীবন জীবীকা থমকে গেছে। এই লকডাউনে ও পেটের ক্ষুধায় দোকান খুলেছিলেন কিন্তু মানুষজন না থাকায়  পকেট খরচের পয়সা ও হবে না।

 

তখন রাত ৯ টা। রেলস্টেশনের প্রবেশ মুখেই এনাম মিয়া নামে এক মানসিক রোগী প্লাটফর্মেই গভীর ঘুমে আছন্ন ছিলেন। উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি জানান, একদিন ধরে ভাত খাননি, পেটের ক্ষুধায় আরও প্রশ্ন করলে ও  আর  কথা বাড়াতে চাননি।

 

চুনারুঘাট থেকে আসা শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে ভিক্ষা করে চলতেন বৃদ্ধা রেনু বেগম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখন মানুষের আনাগোনা নেই তাই আগেরমত ভিক্ষা ও পাননা। কখনো মেঘ, কখনো বা বৃষ্টি স্টেশনেই পার করেন দিন রাত্রী। কখনো কখনো রেলস্টেশনের কর্তারা এসে তাদেরকে তাড়িয়ে ও দেন।

 

তিনি জানান,  মাঝে মাঝে কেউ কেউ খাবার নিয়ে আসেন সেদিন টা ভাল কাটে। আরেকজন  পথশিশু শারমিন আক্তার জানান, স্টেশনে সারাদিন ঘুরে ও ১০০ টাকা পাওয়া যায় না। ট্রেন চালু থাকলে অনেকেই সাহায্য সহায়তা দেন, এখন অনেকদিন অনাহারে থাকতে হয়।

 

প্লাটফর্মে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে থাকা রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন।

 

হিতেশ রবি জানান, রেলস্টেশনে জুতা সেলাই ও জুতা কালার করা মূলত রেলযাত্রীদের উপর নির্ভরশীল।  কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রেল বন্ধ থাকায় আমরা দীর্ঘমেয়াদে পরিবার পরিজনদেরকে নিয়ে  বেকার হয়ে পড়েছি।

 

শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার গৌরিদাশ পলাশ জানান, ঈদের আগে ৬ দিন ট্রেন চালু ছিল, আর ঈদের পরে ১ দিন, মোট ৭ দিন ট্রেন চালু ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও লকডাউন উঠে গেলে আবারও ট্রেন চালু হতে পারে, তখন ট্রেন স্টেশনকে কেন্দ্র করে যেসব হকাররা জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন তারা আবার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।

 

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন সকালে আমি রেলস্টেশনের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে নিজ হাতে খাবার তুলে দিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে আসা নানা অনুদান চাল, ডাল, তেল ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা তাদেরকে পৌঁছে দিয়েছি। ঈদের আগে ট্রেন স্টেশনকে কেন্দ্র করে যাদের জীবন চলে তাদেরকে সকলকেই সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেছি, এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।

 

যাযাদি/ এমডি