নোয়াখালী গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও নির্ভীক ভাস্কর্য উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইজিপি

‘রাজাকারপুত্রদের দম্ভ চূর্ণ করতে হবে এ দেশের সাধারণ মানুষদের’

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২১, ১৮:৪৪ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১, ১৯:০৭

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী

 

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরির্দক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে রাজাকারপুত্ররা স্যোসাল মিডিয়াতে নিজেদেরকে রাজাকারপুত্র বলে দম্ভ করার দু:সাহস দেখাচ্ছে। তাদের এ দম্ভ  চূর্ণ করতে হবে এদেশের সাধারণ মানুষকে।

 

তিনি বুধবার দুপুরে ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য ‘নির্ভীক’ ও জেলা পুলিশের নবনির্মিত তিনটি ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। আইজিপি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানটিতে যোগদান করেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা হতভম্ব  হয়ে দেখি রাজাকারপুত্ররা গভীর দম্ভের সঙ্গে চিৎকার করে বলছে স্যোসাল মিডিয়াতে যে ‘আমি রাজাকারের পুত্র! মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে এ রাজাকারের পুত্ররা কিভাবে এই দু:সাহস পায় এই বাংলার মাটিতে। যারা দু’লক্ষ নারীর ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে; এই গণহত্যার দোসররা মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে আস্ফালন করে স্যোসাল মিডিয়ায় কোটি কোটি মানুষের সামনে বলে যে তারা রাজাকারপুত্র, দম্ভ করে বলে। এ দম্ভ দম্ভ চূর্ণ করতে হবে এদেশের সাধারণ মানুষকে।’

 

পুলিশ প্রধান আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের পূর্বসূরী যারা এই দেশটি আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন, তাদের যে অনবদ্য আত্মত্যাগ, সে মহান আত্মত্যাগের মর্যাদা ধরে রাখার দায়িত্ব হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের সকল মানুষের। এটি একটি ঐতিহাসিক দায়, এটি একটি ঐতিহাসিক কর্তব্য। আজকে যেখানে বাঙালী দাঁড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের মানুষ দাঁড়িয়ে আছে সেটি সম্ভব হয়েছে লাখো শহীদের আত্মদান এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার যে আহ¦ান সেজন্য।’

 

‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের প্রশংসা করে আইজিপি বলেন, ‘বইটিতে নতুন প্রজম্মের সামনে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের বীরোচিত অবদানের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এই সত্য ইতিহাস যেন নতুন প্রজন্ম জানতে পারে সেজন্য বইটি নোয়াখালীর প্রত্যেকটি স্কুল এবং কলেজে বিনামূল্যে সরবরাহের প্ররিকল্পনার কথা জানান তিনি।

 

বক্তব্য শেষে পুলিশ মহাপরির্দক ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, জেলা পুলিশ লাইন্সে স্থাপিত ‘নির্ভীক’ ভাস্কর্য সুধারাম মডেল থানার নতুন ভবন, নোয়াখালী পুলিশ লাইন্সে নির্মিত নারী পুলিশ সদস্যদের ৪ তলাবিশিষ্ট ব্যারাক ভবন এবং সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ৪ তলাবিশিষ্ট নতুন উদ্বোধন করেন।

 

এ সময় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভার্চুয়ারি আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। চট্রগাম থেকে ভার্চুয়ারি বক্তব্য রাখেন রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন।

 

এ উপলক্ষে নোয়াখালী জেলা পুলিশ লাইন্সে নির্ভীক ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি (এ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো.  ইকবাল হোসেন, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালি জেলা গ্রন্থের গবেষক সাংবাদিক আবু নাছের মঞ্জু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সুপার আবদুল হাকিমের ছেলে রবিউল হাকিমের সহপাঠি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন কুমিল্লার হোমনা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইস্পিনা রানী প্রামানিক।

 

এ সময় নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট (ডিআইজি) এস এম রোকন উদ্দিন সহ উধর্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

 

‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ নোয়াখালী জেলা’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ। নোয়াখালীতে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা তুলে ধরা হয়েছে গ্রন্থটিতে, যা এতোদিন অনেকটা চাপা পড়েছিল। গ্রন্থটিতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় নোয়াখালী অঞ্চলের যুদ্ধের প্রস্তুতি, শত্রুর মোকাবেলা ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাইটির সম্পাদক জেলা পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন, গবেষক একেএম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, সাংবাদিক আবু নাছের মঞ্জু ও অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মো: এনায়েত করিম। প্রকাশক বাংলাদেতশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুখবন্ধ লিখেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমদ বিপিএম (বার)।

 

নির্ভীক ভাস্কর্যের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী জেলা পুলিশের আত্মত্যাগ ও দুঃসাহসী ভূমিকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

 

যাযাদি/ এস