শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

​ মৃত্যু সনদের সাথে ঠিক হয় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
  ২৯ জুলাই ২০২১, ১৮:৩০

চট্টগ্রামে এ মুহুর্তে করোনায় আক্রান্ত রোগীর লাশ বেশি। সাথে মুমুর্ষ রোগীও। আছে অন্য রোগে মৃত্যুও। যা বহনে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোন পথ নেই। কারণ কঠোর লকডাউনে চলছে না লাশ বহনের মতো ব্যক্তিগত কোন মাইক্রো বা সিএনজি অটোরিক্সা। আর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স তো সোনার হরিণ।

এ সুবাধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বেসরকারি পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। আদায় করা হচ্ছে স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া। যা মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ নেওয়ার সময় ঠিক করে দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাসপাতালে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্র। যাদের সাথে যোগসাজশ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। যাদের অনুমোদনে হাসপাতাল থেকে লাশ বহনে সৃষ্টি হয়েছে নানা নৈরাজ্য।

গত কয়েকদিন হাসপাতালে আসা বিভিন্ন রোগীর স্বজন, ওয়ার্ড বয় ও অ্যাম্বুলেন্সের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা এনামুল করিম বলেন, চমেক হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনের লাশ নিতে ৭ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিতে হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে ভাড়া নেওয়া হয় ১৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে থাকা কয়েকজন। যা না মেনে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স চাইলেও কেউ লাশ পরিবহণ করতে আসেনি। মনে হয় এক্ষেত্রে সব অ্যাম্বুলেন্স চালক একজোট। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় লাশ নিতে হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) চমেক হাসপাতালে মারা যাওয়া স্বজনের লাশ নেওয়ার সময় আরিফুর রহমান নামে একজন বলেন, লোহাগাড়ায় যেতে ১০ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এটা নির্ধারিত ভাড়ার তিনগুণ বেশি। ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে থাকা কয়েকজন এই ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়।

হাসপাতালে কয়েকজন ওয়ার্ড বয় জানান, ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ঠিক করে দেওয়া নতুন কিছু নয়, এটি দীর্ঘদিনের কাজ। অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি লোকজন ওই কক্ষে বসে থাকে। তবে ওয়ার্ড মাস্টারের টেবিলে থাকা কয়েকজন কর্মচারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করে। তাঁরা মজুরি বাবদ জনপ্রতি মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে পান।

সূত্র মতে, অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির ১০৬ জন মালিকের ১৫০টি অ্যাম্বুলেন্স চমেক হাসপাতাল থেকে রোগী ও লাশ পরিবহনে কাজ করছে। এর মধ্যে ৮৪টি অ্যাম্বুলেন্সের লাশ পরিবহনের অনুমোদন রয়েছে। বাকি অ্যাম্বুলেন্সগুলো অনুমোদন ছাড়াই চলছে।

সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালে কেউ মারা গেলে মৃতের স্বজনেরা ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য ওয়ার্ড মাস্টারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে। সেখানে দায়িত্বরতরা সমিতির লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করে। যা মানতে বাধ্য করা হয়।

সত্যতা স্বীকার করে সমিতির সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটের সাথে কৌশলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। যা মানতে বাধ্য রোগীর স্বজনরা। এখানে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া একটি চক্রের পকেটে ঢুকছে। ন্যায্য ভাড়া গাড়ির মালিকও পান না।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, এখানে অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে। সমিতির নেতাদের নিয়ে সাথে এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি আমরা। হাসপাতালের চক্রটির উপর পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হবে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে