বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বটিয়াঘাটায় বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

মহিদুল ইসলাম, বটিয়াঘাটা
  ৩০ জুলাই ২০২১, ১২:৫১

"পুটি মাছের কাঙ্গালি,ভাত মাছের বাঙ্গালী "এসকল কথা এখন খুলনা বটিয়াঘাটার মানুষের শুধু প্রবাদ মাত্র। এই এলাকার চিরচেনা মাছ কৈ,সিঙ্গি,বাইন, মাগুর,বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার দেশীয় প্রজাতির মাছ নানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো দেশীয় প্রজাতির যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে তাও প্রায় বিলুপ্তির পথে। উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় যেসব সরকারি খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়ে দেশীয় প্রজাতির মাছের আবাসস্থল ও বংশবিস্তার করে আসছিল। সেগুলো আজ ভুমিদশ্যুদের দখলে।

বর্তমানে যেসব দেশীয় প্রজাতির মাছ আছে তাও প্রায় বিলুপ্তির পথে সেগুলো হলো বোয়াল, শৈল,বাইন, টাকি, কই, মাগুর, সিঙ্গী, কড়েপুঁটি, তিত-পুঁটি, মৌরলা, ডগরা ইত্যাদি। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব সরকারি খাল, বিল, হাওর ও বাঁওড়গুলোর অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারিদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদের জন্য বহুবার অভিযান চালিয়ে উন্মুক্ত করার চেষ্টা চালালেও নানা জটিলতার কারণে আবারও দখল বাজরা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে নানা কারণে উপজেলার এসব খাল, হাওর, বাঁওড় বিলসহ বিভিন্ন আবাসস্থল হারিয়ে গেছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়া, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকসহ ভূমি দস্যুরাও কৃষিজমি নষ্ট করে অবৈধ প্লট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকারি খাল ভরাট করে নানান সমস্যার কারণ হিসেবে দাবি করছে বিশেষজ্ঞ মহল। এ আঞ্চলের যেসব দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে সেগুলো হলো সরপুঁটি, কৈ, গজাল, বাইন, বোয়াল, চিতল, মাগুর ইত্যাদি। অপরদিকে অবৈধ প্লট ব্যবসায়ীরা সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষিজমি ধ্বংস করে প্লট নির্মাণ করেছে এবং ওই সকল প্লটের পাশে থাকা সরকারি খাল ভরাট করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করছে। যে কারণে মাছের বংশবিস্তারের আবাসভূমি হারিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ কালে পুটিমারির গ্রামের সোহরাব, কল্যানশ্রী গ্রামের জিল্লুর, রায়পুর গ্রামের ইসমাইল সরদার, বিরাট গ্রামের বায়জিদ, বারোআড়িয়া গ্রামের দিপকের কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, মাছের বংশবিস্তারে ও তাদের বিচরণে জায়গা কমে যাওয়ায় এসব দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশীয় চাষ করলে অনেক লাভ করা সম্ভব। তাছাড়া ১০/১২ বছর আগে উপজেলার সব খালগুলোতে ১২ মাস পানি থাকতো কিন্তু এখন ওই সব খালগুলো পৌষ,মাঘ মাসে শুকিয়ে যায় এমনকি বিলেখালে লাগানো সব্জি,ধান বা তরমুজ গাছে প্রচুর পরিমাণ কিটনাশক ব্যবহারের কারণে দেশিয় মাছগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এগুলো বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ শুরু করলে আবার সেই হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরে পাওয়া সম্ভব।

সার্বিক বিষয় যায়যায়দিন বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি মহিদুল ইসলাম শাহীন এর সঙ্গে একান্ত স্বাক্ষাতে খুলনা বিভাগীয় সাসটেইনেবল কোষ্টাল অ্যান্ড প্রযেক্টর উপ- প্রকল্প পরিচালক ও মৎস্য অফিসের উপ পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রি বলেন, প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্টি বিভিন্ন কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেলেও বাংলাদেশ মৎস্য দপ্তর কত্তৃক তা পুনরুদ্ধারে নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। মাছের আবাসস্থল উন্নয়ন, জলাশয় সংস্থার, মৎস্য অভয়শ্রয় ¯হাপন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন, মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করণ, সমাজ ভিত্তিক মৎস্য ব্যব¯হাপনা জোরদার করণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করণ, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ¯হানীয় জনসাধারণের সক্রিয় অংশ গ্রহনসহ নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে দিন দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিলুপ্ত মাছগুলো আবার দেখা মিলছে।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে