শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
​ চাকুরি রক্ষার কষ্টের যাত্রা

গাজীপুরে মহাসড়কে জনস্রোত, সীমাহীন ভোগান্তি

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ৩১ জুলাই ২০২১, ১৯:৩৫

সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যেই ১লা আগষ্ট থেকে কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণার পর চাকুরী রক্ষায় শনিবার সকাল থেকেই গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যেন মানুষের ঢল নেমেছে। সর্বত্র গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ঈদের ছুটিতে থাকা শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরতে নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পরিবহন সংকটে পণ্যবাহী ট্রাক, প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারী চালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিক্সা ও পণ্যবাহী খোলা ট্রাক-পিক আপেও তাদের ফিরতে দেখা গেছে।

গাজীপুরের মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে হাজার হাজার শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

শনিবার সকাল ৮টার পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রমিকদের এ ঢল নামে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কর্মস্থলে ফিরতে মহাসড়কে শ্রমিকদের এক প্রকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতার মধ্যে বাধ সাধে শ্রাবণের বৃষ্টি। এ বৃষ্টি কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকদের দুর্ভোগ আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে পরিবার নিয়ে রওনা হয়েছেন পোশাক শ্রমিক নাদিম মিয়া। তিনি জানান, ত্রিশাল থেকে মাওনা চৌরাস্তা প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ আসতেই তার দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাকী পথ কি করে যাবেন, কত টাকা খরচ হবে, না হবে তার কথা চিন্তা না করে চাকুরি রক্ষার কথা মাথায় রেখেই কর্মস্থলে যেতে অটো রিকশার চালকের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। এজন্য তিনি একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক আব্দুল মালেক এর সাথে কথা বললেন। অটোর চালক তাদের প্রতিজনের জন্য টঙ্গী পর্যন্ত ভাড়া চাইলেন ১৫০০টাকা। এতে তার সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে।

সিএনজি চালক মালেক মিয়া জানালেন, সিএনজি নিয়ে মহাসড়কে হয়ে টঙ্গী যাওয়া যাবে না, কিছু পথ ঘুরে যেতে হবে। তারপরও পথে পুলিশ আটকে দিবে, মামলা দিয়ে আটক রাখবে। আমরা ভেতরের সড়ক ধরে টঙ্গী পর্যন্ত যাবো। তাই একটু ভাড়া তো বেশি দিতেই হবে।

এছাড়াও মোটরসাইকেলে মাওনা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক পথে যেতে জনপ্রতি ৪০০টাকা, অটোরিকশায় ২৫০টাকা থেকে ৩০০টাকা, খোলা ট্রাকে জনপ্রতি ২০০টাকা থেকে ২৫০টাকা, পিক আপ ২০০টাকা থেকে ৩০০টাকা পর্যন্ত ভাড়া করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসার অপর শ্রমিক তামিম আহমেদ জানান, রাতে রওনা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিভিন্ন রিকশা, ভ্যান যোগে জৈনাবাজারে পৌছেছি। রাস্তায় অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

মাসুমা আক্তার নামের অপর কারখানার শ্রমিক জানান, তিনি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করেন। ভালুকা থেকে অটোরিক্সায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার পর্যন্ত আসেন। যেখান থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় বাকী সড়ক তিনি হেঁটেই রওনা দেন। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময় রাজেন্দ্রপুর থেকে ভালুকার বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৬০টাকা। কিন্তু লকডাউনে কয়েকগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এটা যেন দেখার কেউ নেই।

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়। এসব যাত্রীরা ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মানুষ সারারাত ট্রাক, পিকাপ, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল যোগে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ফিরছেন।

তারা বিভিন্ন উপায়ে গাজীপুরে প্রবেশ করলেও এখানে এসে যানবাহন না পেয়ে বাকি রাস্তা পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছে।

স্থানীয় ঢাকার মিরপুর এলাকার এক পোশাক কারখানার শ্রমিক জামাল উদ্দিন জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় রওনা দিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও থেকে। ২হাজার ৫০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে মাইক্রো করে চন্দ্রা ত্রিমোড়ে পৌঁছেছি। যাত্রাপথে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানালে তিনি। কিন্তু যানবাহন না পেয়ে বসে আছেন কালিয়াকৈরের চন্দ্রায়।

টঙ্গী চেরেগআলী মার্কেট এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক বেলাল হোসেন বলেন, রাত ১১ টায় কাঁচামালবাহী ট্রাকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছি। তিনি কাজ করেন টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ফ্যাক্টরি থেকে এসএমএস দিয়েছে। রোববার সকাল হতে কাজে যোগ দিতে। এজন্য রাতেই রওনা হয়েছি। চাকুরিতে যোগ না দিলে চাকুরি হারাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নানা ভোগান্তির মধ্যেও কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হই।

চন্দ্রা এলাকায় ঢাকা-ট্ঙ্গাাইল মহাসড়কে অবস্থানরত সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার ওসি মীর গোলাম ফারুক জানান, আমরা গণপরিবহণ চরতৈ দিচ্ছি না। তারপরও লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রাম থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নেমে পড়েছে। ট্রাক-পিক আপে, অটো রিকশাসহ ছোট যানবাহনে করেই তারা গন্তব্যে ফিরছে। এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মেহেদী হাসান জানান, লকডাউন চলাকালে আমরা অনুমোদিত গাড়ি ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অন্যকোন যানবাহন গাজীপুর মহানগরের ঢুকতে দিচ্ছি না। ফলে মহানগরের বাইরে রাজেন্দ্রপুরসহ আশেপাশে অন্য যানবাহণে নেমে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটে চলেছেন।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে