​ জাজিরায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারপিট : আওয়ামী লীগের ক্লাব ভাঙচুর

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ১৯:৩৬

জেলা প্রতিনিধি

 

 

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বি.কে নগর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যনের লোকজন প্রতিপক্ষকে মারপিট করে আওয়ামী লীগের ক্লাব ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে।

 

শুক্রবার(৩০ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বি.কে নগর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদারের ভাই আব্দুল সরদার শতাধিক লোকজন নিয়ে এ মারধর ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ববৃহস্পতিবার সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মজিবুর মাদবরের আত্মীয় কালাম বেপারীর ছেলে রেদওয়ান ইসলাম আলিফ(১৫) বি.কে নগর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলতে গেলে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের ভাই আব্দুল সরদারের ছেলে সিয়ামের(১৫) সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সন্ধ্যায় আলিফকে একা পেয়ে আব্দুল সরদার নিজে আলিফকে লোহার রড দিয়ে মারধর করে। পরদিন (শুক্রবার) মোস্তাফিজুর রহমান মজিবুর মাদবরের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই আজিজ মাদবরের ছেলে রাকিব(১৪) একই মাঠে আবার খেলতে গেলে আব্দুল সরদারের ছেলে সিয়াম তার বন্ধুদের নিয়ে রাকিবকে মারধর করতে থাকে। এসময় রাকিবের সাথে থাকা তার বন্ধুরা মিলে আব্দুল সরদারের ছেলে সিয়ামকেও মারধর করে। এ সংবাদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার ও তার ভাই আব্দুল সরদারের কাছে পৌছলে তারা সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মজিবুর মাদবরের কোনো সমর্থক বি কে নগর বাজারে ব্যবসা করতে পারবে না বলে ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সাইদুর সরদারের লোকেরা বিকে নগর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদ বেপারী, হামজালা মিয়া, তারা মিয়া মোল্লাসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারধর করে।

 

স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান সাইদুরের সমর্থক আব্দুর রব সরদার, কুদ্দুস সরদার, ইদ্রিস সরদার, এরশাদ মাদবর, জসিম মাদবর, মন্টু হাওলাদার, সুরুজ হাওলাদার, ফয়সাল সরদার, রায়হান সরদার, রাজ্জাক মাদবর, নাছির মাদবর, ফারুক মাদবর, কামরুজ্জামান মাদবরসহ শতাধিক লোক বাজারে মারটিট, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়।

 

বাজারে হামলা করে ক্লাব ভাঙচুর, ব্যবসায়ীদের মারপিটের ঘটনা মজিবুর মাদবর জাজিরা থানা পুলিশকে অবগত করলে থানা পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনে। তারা দেখতে পান শেখ মুজিব স্মৃতি সংসদ নামের আওয়ামী লীগের ক্লাবঘরটি ভাঙচুর করছে। তবে, এ বিষয়ে পুলিশের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদ বেপারী বলেন, কোথা থেকে কী হয়েছে আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ চেয়ারম্যান ও তার ভাই আব্দুল সরদার লোকজন নিয়ে এসে আমাকে মারধর করছে। আমার দোকান তছনছ করছে।

 

চায়ের দোকানদার ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার তারা মিয়া মোল্লা বলেন, হঠাৎ করেই এসে আমার দোকানের চায়ের ক্যাথলি, কাপ ফেলে দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করেছে, আমি কিছুই বুঝতে পারিনি, কেন আমাকে মারপিট করা হচ্ছে।

 

রেদওয়ান ইসলাম আলিফ জানান, আমি গত পরশু খেলতে গেলে সিয়ামের সাথে আমার তর্কাতর্কি হয়। পরদিন আমি বাজারে গেলে চেয়ারম্যান সাইদুর সরদার নিজে দাড়িয়ে ছিল আর আব্দুল সরদার আমাকে রড দিয়ে পিটিয়েছে।

 

রাকিব হোসেন জানান, মাঠে একা পেয়ে আব্দুল সরদারের ছেলে সিয়াম আমাকে মারধর করেছে।

 

এবিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মজিবুর মাদবর বলেন, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট ছেলেরা তর্কাতর্কি ও মারামারি করছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও তার ভাই আব্দুল সরদার লোকজন নিয়ে বাজার সেক্রেটারি সাইদুর বেপারী, তারা মিয়া মোল্লা, হানজালা ও সাধারণ মানুষকে মারধর করছে। এসময় বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে শেখ মুজিব স্মৃতি সংসদ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে লুটপাট করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকেরা দুইটি এসি, শতাধিক চেয়ার, ক্লাবের আলমিরা লুট করে নিয়ে গেছে। মজিবুর মাদবর বলেন, আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করায় এবং মামলা করতে বারণ করায় আমি এখনো থানায় মামলা করিনি।

 

এবিষয়ে জানার জন্য চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদারকে বার বার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে ফোন কল কেটে দিয়েছেন।

 

জাজিরা থানার ওসি (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল বলেন, বাচ্চাদের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর জেনেছি। শুক্রবার রাতে থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।  শনিবার বিকেলে মাননীয় সংসদ সদস্য ঘটনাস্থলে এসেছেন। এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ হয়নি।

 

যাযাদি/ এস