​ছাপড়া ঘর তুলতেও টাকা দিতে হয়!

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২১, ২১:১৬

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

 

 

গাজীপুরের শ্রীপুরে কয়েকশ বছর ধরে বসবাস করে আসা কিছু সরকারি জমিতে গৃহহীনের ছাপড়া ঘর নির্মাণের সময় টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আনোয়ার হোসেন নামে একজনের বিরুদ্ধে। সোমবার (২ জুলাই) এ বিষয়ে পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামের দুজন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

 

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন (৩০) পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি নিজেকে একটি দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকেন।

 

থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ ভাংনাহাটি এলাকার মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে সালা উদ্দিন  তার পিতার মৃত্যুর পর ৪৫ বছর ধরে নিজেদের দখলিকৃত জমিতে বসবাস করে আসছেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দীর্ঘদিনের ঘরের ছাউনি পুরাতন হওয়ায় ভেতরের  আসবাবপত্র বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট এবং বৃদ্ধা মায়ের অসুবিধা হচ্ছিল। পরে ওই ঘর মেরামতসহ পাশেই টিনের ছাউনির মাধ্যমে একটি ছাপড়া ঘর নির্মাণ করতে যান সালা উদ্দিন। এমন খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন আনোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন। তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। একই সময়ে সালাউদ্দিনের প্রতিবেশী স্থানীয় আব্দুর রহমানের ছেলে শুক্কুর আলীর নির্মাণাধীন ছাপড়া ঘর থেকেও একই অঙ্কের টাকা দাবি করেন আনোয়ার।

 

ভুক্তভোগী সালা উদ্দিন ও শুক্কুর আলী জানান, ‘এ সময় আনোয়ার হোসেন তার ব্যবহৃত মোবাইলে ঘরের ছবি তোলেন। টাকা না দিলে ওই ছবি বন বিভাগের ডিএফওকে দিয়ে ঘরের কাজ বন্ধ করে দিবেন বলে হুমকি দিয়ে চলে যান। আমরা তো গরিব মানুষ, এত টাকা দিব কোত্থেকে।’

সরেজমিনে আরও জানা যায়, উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের বাউনি, পটকা, কর্ণপুর, রাজাবাড়ি ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ি, ডোয়াইবাড়ি, মিটালু, ইজ্জতপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি, লোহাগাছ ও সিরাতুলি এলাকায় বনের জমি বেশি হওয়ায় কিছু কিছু জমিতে নিম্ন আয়ের অনেকেই ছাপড়া তুলে বসবাস করে আসছেন। এসব এলাকায় গিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন।

 

একই এলাকার ফজলুল হক জানান, ‘আমার ঘর করার সময় আনোয়ারকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়াও একই এলাকার জসিম মিয়ার ঘর নির্মাণের সময় ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে আনোয়ার হোসেনকে।

 

মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ছাপড়া ঘর তুলতে গিয়েও আনোয়ার হোসেনকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোসিংগা এলাকার বাউনি বাজারের পশ্চিম পাশের সুরুজ মিয়া।

 

বিন্দুবাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী জলিল মিয়া জানান, ‘আমি একটি ঘর করতে গিয়ে আনোয়ার হোসেনের বাধায় পড়েছিলাম। পরে সকল সাংবাদিকের সহায়তায় সমাধান হয়েছে। তবে, এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি আনোয়ার হোসেন।’

 

শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের সদর বিট কর্মকর্তা সজিব কুমার জানান, ‘দালালদের অত্যাচারে বন বিভাগের লোকজন অতিষ্ঠ। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে অনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে শুনতে হয়। তারা দাবি করেন, অফিসের নাম করে টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ অফিস এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের নামই বেশি রয়েছে। ’

 

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানান, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। খোঁজ নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

 

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, ‘আনোয়ার হোসেন কোনো সংগঠনের সদস্য নন। যোগ্যতা ছাড়া কিছু ভুঁইফোড় মিডিয়া কার্ড বিক্রির মাধ্যমে আজকে এ পেশাকে কলঙ্কিত করছে। তাই এদেরকে বয়কট করতে হবে।’

 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন যায়যায়দিনকে জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

যাযাদি/এস