চলন্ত ট্রেনের ছাদে ডাকাতের হামলায় দুই যাত্রী নিহতের ঘটনায় পাঁচ ডাকাত গ্রেফতার

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৪৭

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

 

 

ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনের ছাঁদে ডাকাতের হামলায় ২যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৪। চলন্ত ট্রেনের ছাঁদে ডাকাতি করতে বাঁধা দেওয়াতেই ঐ দুই যাত্রীকে ছুরিকাঘাতে ও কুপিয়ে খুন করে বলে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আটককৃতরা।

 

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ময়মনসিংহ নগরীর শিকারীকান্দা এলাকার আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬), বাঘমারা এলাকার মঞ্জু মিয়ার ছেরে মাকসুদুর হক রিশাদ (২৮), সাব্বির খানের ছেলে মো. হাসান (২২), মৃত আশরাফ আলীর ছেলে রুবেল মিয়া (৩১),  ও সাব্বির খানের ছেলে মোহাম্মদ (২৫)।

 

রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে র‌্যাব-১৪ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

 

এর আগে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-১৪।

 

র‌্যাব-১৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া অফিসার মো. হান্নানুল ইসলাম জানান, ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনের ছাঁদে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আশরাফুল ইসলাম স্বাধীনকে নগরীর শিকারীকান্দা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে লুন্ঠিত মোবাইল জব্দ করার হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অপর চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

 

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৪ জন পেশাদার ডাকাত ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে।

পরে রিশাস, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সাথে যোগ দেয় মোহাম্মদ ও তার একজন সহযোগী। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগি'র ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন নেয়া শুরু করে। 

 

ডাকাতির এক পর্যায়ে নিহত সাগর মিয়া ও নাহিদ তাদের বাধা দিলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাথারী কুপিয়ে আহত করে। সাগর, নাহিদ ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়লে ডাকতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢুকার পূর্বে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন হতে নেমে যায়।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও স্বীকার করে, এদের এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার কমলাপুর এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন হতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত।

 

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেযার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বরেও জানান তিনি।

 

এ ঘটনায় শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২ টার দিকে ছুরিকাঘাতে নিহত সাগরের মা হনুফা খাতুন বাদী হয়ে ময়মনসিংহ জিআরপি থানায় অজ্ঞাত ৮/১০ জনকে  আসামী করা হয়েছে।

 

পরে এ ঘটনায় শিমুল মিয়া (২২) নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হলে ২৭ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

 

কারাগারে পাঠানো শিমুল মিয়া নগরীর কৃষ্টপুর এলাকার সিরাজ আলীর ছেলে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ছাঁদে গফরগাঁও স্টেশনে কয়েকজন ডাকাত উঠে। এ সময় ছাঁদে থাকা তিন যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইলসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সময় বাঁধা দিলে ডাকাতরা প্রথমে দুজনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ও পরে রুবেল মিয়াকে ফেরাতে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে।

 

পরে ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে ঢোকার আগেই কেওয়াটখালী ওভারব্রীজের কাছে মোবাইল ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে ছিনতাইকারীরা নেমে পড়ে। ট্রেনটি জামালপুর গিয়ে তিনজনকে ছাঁদ থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে দুই জনকে মৃত ঘোষণা করে।

 

নিহতরা হলেন, নাহিদ মিয়া (৪০) সে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি মিতালী বাজার এলাকার ওয়াহেদ মিয়ার ছেলে, সে ঢাকায় একটি কোম্পানীতে কর্মরত ছিল এবং সাগর মিয়া (২৫) সে একই জেলার পৌরশহরের বাগেরহাটা এলাকার মো. হাজারুল মিয়ার ছেলে, সে ঢাকায় রিক্সা চালাতো।

 

যাযাদি/ এস