শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন : কোম্পানীগঞ্জে নৌকা প্রতীক পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

তারিকুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
  ০৩ অক্টোবর ২০২১, ১৯:০৮

দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আর মাত্র ৩৯ দিন বাকি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভোটারদের নজরকাড়ার চেষ্টায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ভোটারদের ঘরের দরজায় কড়া নাড়া থেকে শুরু করে মাঠেঘাটে টুকরি কোদাল নিয়ে মাটি কাটার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বেশি এগিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ২য় ধাপের তফসিল তালিকায় থাকা কোম্পানীগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নের আগামী ১১ নভেম্বরে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান/মেম্বার প্রার্থীরা। তবে ভোটারদের প্রধান আগ্রহ কে থাকছেন নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী। কে হচ্ছেন আগামীর চেয়ারম্যান?

উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১ নং ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সীমানা জটিলতার দুয়োধ্বনিতে মামলাজনিত কারণে আটকে গেলেও অন্য ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে আগামী ১১ নভেম্বর। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগসমর্থিত একক প্রার্থী দিতে গত শনিবার (০২ অক্টোবর) বিকাল ৬টার সময় উপজেলা অডিটরিয়ামে এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়ার সঞ্চলনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁন।

সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দুলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমল আলী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মবস্বির আলী, দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক জগলু চৌধুরী, উপ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক মজির উদ্দিন, সদস্য জামাল আহমদ ও গোলাপ মিয়া।

সভায় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে কাউন্সিলররা গোপন ভোটের মাধ্যমে দলীয় যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পায়।

২ নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে বিগত ৭টি ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদকে কাউন্সিলরদের ভোটে পরাজিত করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদ গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মিয়ার কাছে পরাজিত হন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াছুর রহমানের চেয়েও কম ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। বিগত ৭ বার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সফলতার মুখ না দেখলেও হাল ছাড়েননি প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসীর চাপে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন বলে জানান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

এদিকে তৃণমূলের ভোটে জয়ী মুল্লুক হোসেনের পূর্বে কোনো নির্বাচনী অভিজ্ঞতা না থাকলেও অত্র ইউনিয়নে রয়েছে তার যথেষ্ট আধিপত্য। কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত দুইবারের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন নৌকার টিকিট যদি পেয়েও যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের কাছে টানতে পারলে নতুন মুখ পাবে পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ। তবে জনপ্রিয় চেয়ারম্যান বাবুল মিয়াকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে তাকে। প্রতিদ্বন্দ্বী বাবুল মিয়া ছাড়াও মুল্লুক হোসেনের জয়ের পথে মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারেন আরেক নবীণ প্রার্থী আলমগীর আলম মেম্বর। যিনি নিজস্ব ভোট ব্যাংক নিয়েই মাঠে নেমেছেন।

৩ নং তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের পরপর দুই বারের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ কাজি আলফু মিয়া কাউন্সিলিং পদ্ধতিতে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকছেন আবারও। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা এবারের নৌকার টিকিট পাচ্ছে না শুনে হয়তো কাজি আলফু মিয়া কাউন্সিলিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করেননি।

এদিকে নির্বাচনের মাঠে নতুন মুখ উপজেলা যুবলীগের সদস্য দেলোয়ার মাহমুদ রিপন তৃণমূলের ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে সাবেক চেয়ারম্যান নুর মিয়াকে পেছনে ফেলে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্তিশালী প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ কাজি আলফু মিয়া। কাজি আলফু মিয়ার জনপ্রিয়তা উতরাতে পারলেই দীর্ঘদিন পরে নতুন মুখ দেখতে পাবে অত্র ইউনিয়ন। তবে বিপুল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কাজি আলফু মিয়ার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। কারিশমাটিক ভূমিকায় নির্বাচনী জয় ছিনিয়ে আনা আলফু মিয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে পারলে হ্যাটট্রিক জয় ঘরে তুলতে পারবেন।

এদিকে ৪নং ইছাকলস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায় কাউন্সিলিং পদ্ধতি আপাতত স্থগিত, তবে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক তা একধরনের ধূম্রজালে বন্দি রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান'ই নৌকা প্রতীক পাচ্ছেন। কেননা গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান কুটি মিয়ার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে অল্প ভোটের ব্যবধানে পড়াজিত হয়েছেন তিনি। নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী নতুন মুখ উপজেলা যুবলীগের সদস্য রিয়াজুল ইসলামও হাল ছাড়ছেন না। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই সদস্যের মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকলেও আওয়ামী লীগের আস্থা অর্জন করাটা তার জন্য বেশ কঠিন। শেষে কে হচ্ছেন ইছাকলস ইউনিয়নের নৌকার কাণ্ডারী তা জেলা আওয়ামী লীগই নির্ধারণ করবেন।

৫ নং উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদে হ্যাটট্রিক জয়ী চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে উদ্ধার করে আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে বছর কয়েক ধরে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফয়জুর রহমান মাস্টার। পাড়া থেকে গ্রাম, ঘাট থেকে মাঠ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজস্ব তহবিল নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন।

শনিবারের কাউন্সিল পদ্ধতিতে ফরিদ উদ্দিনের কাছে দুই ভোটে হারলেও মাঠ পর্যায়ে তুমুল জনপ্রিয় এই ব্যক্তি নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া। ডেলিকেটর পদ্ধতিতে ফরিদ উদ্দিন নির্বাচিত হলেও গত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্য করে নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিদ্রোহী তকমা লেগে আছে তার কপালে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী তকমায় কপাল পুড়তে পারে ফরিদ উদ্দিনের। নৌকা প্রতীক পাওয়ার শেষ হাসি ফুটতে পারে ফয়জুর রহমানের মুখে। তবে নির্বাচনে শত চাপে থেকেও শেষ পথে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ফরিদ উদ্দিন যেন সব সময়ের ‘হিরো অব দ্যা ইলেকশন’।

স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ও যুব সমাজের ভদ্র চেয়ারম্যান খ্যাত উপজেলা আওয়ামী লীগে সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান রোকন প্রার্থী না হওয়ায় যোগ্য প্রার্থীখরায় ভুগছে ৬ নং দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ। নির্বাচনের জাদুকর খ্যাত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তৈয়বুর রহমানের পরিবারভুক্ত ও ছিদ্দিকুর রহমান রোকনের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম নৌকা প্রতীক প্রত্যাশায় কাউন্সিলিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করলেও আরেক নতুন মুখ ইকবাল হোসেন ইমাদের কাছে হেরে মুখ থুবড়ে যান। দীর্ঘদিন প্রচার-প্রচারণা চালানো এই আওয়ামী লীগ নেতা শেষ পর্যন্ত মাঠে না থাকলে ইকবাল হোসেন ইমাদকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে অত্র ইউনিয়ন পরিষদ।

তবে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি তা পরিষ্কার হবে মাসের ১০ তারিখে। এরপর ১৭ অক্টোবরের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে মনোনয়ন পেপার সংগ্রহ ও জমা করতে হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২০ অক্টোবর। বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর। আপিল নিষ্পত্তি ২৪ ও ২৫ অক্টোবর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ তারিখ। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৭ অক্টোবর। যদিও অক্টোবরের ১০ তারিখেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াতে চাইলেও ২০ অক্টোবর বাছাই প্রক্রিয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত অপেক্ষা করতে হবে। ১১ তারিখই ভোটের সমীকরণ শেষ হবে। কেউ পড়বে জয়মাল্য; কেউবা পুনঃ আশায় বুক বাঁধবে।

গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১নং ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া সব কয়টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি হয়েছিল। একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান করায় এই ভরাডুবির কারণ বলে জানান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মজির উদ্দিন। বর্তমান ইউপি নির্বাচনে যদি যোগ্য ও তৃণমূলমুখী প্রার্থী বাছাই করা হয় তবে আগের ভরাডুবি দুর্নাম ঘোচাতে পারে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মজির উদ্দিন দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিবেদককে বলেন, নৌকা প্রতীক যাকেই দেওয়া হবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। যারা বিদ্র্রোহী প্রার্থিতা ঘোষণা করবে তাদেরকে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তানুযায়ী দল থেকে চির বিদায় নিতে হবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে