শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিজয়ের হাসি বৃদ্ধ শামসুল আলমের চোখেমুখে’

মুহাম্মদ মনজুর আলম, চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ১৮ অক্টোবর ২০২১, ২১:১৭

শামসুল আলমের জীবনের দীর্ঘ ৬৫টি বছর কেটে গেছে ইলিশিয়া জমিদার বাড়িতে কাজ করে। বাবা অলি আহমদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই জমিদার বাড়িতেই ব্যয় করেছেন এই পুরোটা সময়। বিয়ের পর সংসার জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুর সাক্ষীই যেন জমিদার বাড়ি। এ কারণে তাকেও (শামসুল) জমিদার পরিবারের সদস্য হিসেবেও জানত অনেকে। কিন্তু এক ইঞ্চি জমিও যে নিজের নামে নেই বা পৈতৃকভাবে পাননি সেই হতাশায় প্রতিনিয়ত ভুগতেন তিনি।

নিজের ভেতর প্রশ্ন জাগত- জীবন তো অনেকটাই শেষ, এই পরিণত বয়সেও কী নিজের নামে এক টুকরো জায়গা হবে না। যে জায়গায় স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। সন্তানসন্ততিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন।

বৃদ্ধ শামসুল আলমের সেই আশা পূরণ হয়েছে মুজিবশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে। দুই শতাংশ জায়গাসহ পাওয়া স্থায়ী সুখের নীড়েই এখন সময় পার করছেন তিনি। আওড়াচ্ছেন জমিদার বাড়িতে ফেলে আসা দীর্ঘজীবনের সেইসব স্মৃতি। উপহারের ঘর পেয়ে বৃদ্ধ শামসুল, স্ত্রী হোসনে আরাসহ পরিবার সদস্যদের চোখেমুখে এই যেন বিজয়ের হাসি পরিলক্ষিত হয়েছে।

বৃদ্ধ শামসুলের স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইলিশিয়া বাজার পাড়ার খাস জায়গায়। তার সংসারে স্ত্রী ছাড়াও দুই কন্যা এবং তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। তন্মধ্যে দুই সন্তান বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছেন, বড় কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকিদের নিয়ে বৃদ্ধ শামসুল শান্তির নীড়ে রয়েছেন।

একই এলাকায় স্থায়ী নিবাস হয়েছে ২০ বছর আগে স্বামী পরিত্যক্তা জোসনা বেগমের (৫০)। তার নেই কোন সন্তানসন্ততি। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দুই বেলা খেয়ে এখন শান্তিতে বসবাস করছেন তিনি। একইভাবে জীবনের স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন ইলিশিয়াস্থ চৌয়ারফাঁড়ির ইদ্রিস আহমদের পুত্র রিকশাচালক অতি দরিদ্র সালাহউদ্দিন। স্ত্রী, দুই শিশুসন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছেন তিঁনি।

সম্প্রতি সরেজমিন এসব পরিবারে গিয়ে দেখা গেছে, খুব সুখে-শান্তিতেই সময় পার করছেন পরিবার সদস্যরা। এ সময় দুই হাত তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন পরিবারের সদস্যরা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাড়িগুলো নির্মাণে আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়েছেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিপিপি চকরিয়ার টিম লিডার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও।

তিনটি অতি দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনে সহায়তা করতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিনটি পরিবার পুনর্বাসিত হওয়ায় আমিও বেশ খুশি। আগামীতেও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়াদান অব্যাহত থাকবে।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দুই দফায় কক্সবাজারের চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে ৩৮০টি পরিবারকে। তন্মধ্যে রয়েছে দুস্থ, অসহায়, দরিদ্র ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, বুয়া, রিকশাচালক, দিনমজুরসহ নানা শ্রেণির অতি দরিদ্র পরিবার। আরও ৫০ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে স্থায়ী বাড়ি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দুই দফায় চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নে ৩৮০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ‘জমি নেই ঘর নেই’এমন শ্রেণিভুক্ত (ক) পরিবারগুলোকে বাছাই করে কবুলিয়ত দলিল, খতিয়ান হস্তান্তরসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দুই শতাংশ বাড়িগুলো প্রদান করা হয়। বর্তমানে এসব পরিবার সুখেই বসবাস করছেন।’

ইউএনও জানান, একই ক্যাটাগরির আরও ৫০ পরিবারকে অচিরেই পুনর্বাসন করা হবে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে