শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

​ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরের আঘাতে ডোমারের শিশু আজমীরের ডান চোখের আলো নিভে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী
  ১৯ অক্টোবর ২০২১, ২০:২১

ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত নীলফামারীর ডোমারের শিশু আজমীরের ডান চোখের আলো নিভে গেছে। সোমবার শিশুটির ফলোআপ চিকিৎসা করতে গিয়ে ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের বিশেষঞ্জ চিকিৎসকগণ নানা প্রকার পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে এই মতামত জানিয়েছেন। অপরদিকে রেলওয়ে থানায় দায়েরকৃত মামলার কোন অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ আজমীরের পরিবারের।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার আমবাড়ি গ্রামের মাছের হ্যাচারি ব্যবসায়ী মারুফ ইসলামের ছোট ছেলে আজমীর। চলতি বছরের কোরবানীর ঈদে ডোমারের গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী সন্তানসহ ঈদ উদযাপন করেন তিনি। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে ডোমার থেকে সৈয়দপুর ফিরছিলেন। সৈয়দপুর রেলস্টেশনের হোম সিগন্যালের কাছে হঠাৎ বাইরে থেকে আসা একখন্ড পাথর তার ডান চোখে আঘাত করে। চোখ থেকে অঝরে রক্ত ঝরতে থাকে। এ অবস্থায় সৈয়দপুর স্টেশনে নেমে রেলওয়ে পুলিশের এএসআই প্রভাষ কুমারের সহায়তায় দ্রুত সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডা. রবিউল ইসলাম দ্রুত শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ওই হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রাশেদুল ইসলাম মাওলার শরণাপন্ন হলে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। পরের দিন ১৬ আগষ্ট রাজধানীর ফার্মগেটের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আজমীরকে। সেখানে ১৭ আগষ্ট আজমীরের চোখের (কর্নিয়া) অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এরপরেও তার দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

এ ব্যাপারে ঢাকায় অবস্থানরত আজমীরের বাবার সাথে মঙ্গলবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকার বেশী খরচ হয়েছে। তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে যে চিকিৎসা করবো তারও সামর্থ আমার নেই।

এদিকে ঘটনার পরদিন ১৬ আগস্ট সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার ময়নুল হোসেন বাদী হয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় (মামলা নম্বর-১) ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৪২৭ ও ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। পাথর নিক্ষেপে করে যাত্রীকে গুরুতর জখম এবং ট্রেনের জানালার গ্লাসের ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামরাটি রুজু করা হয়। ওই মামলায় ট্রেনের বগির একটি জানালার গ্লাসের ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে আনুমানিক পাঁচ হাজার টাকা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান বিশ্বাস জানান, আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কিছু তরুন-যুবককে আটক করেছিলাম। তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলনা বলে তদন্তে বেরিয়ে আসায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তবে মুল হোতাদের গ্রেফতারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেলওয়েতে গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১১০টি। এতে ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙেছে ১০৩টি এবং আহত হয়েছেন ২৯ জন। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় শাস্তির বিধান আছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের কথা বলা আছে। আর কোনো রেলযাত্রী মারা গেলে ৩০২ ধারায় ফাঁসিরও বিধান আছে। পাথর নিক্ষেপকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে, সে ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের শাস্তির বিধান আছে।

যাযাদি/এসআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে