শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

​রাতের আকাশে ঝিলিমিলি রঙিন ফানুস

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২১ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৩২

সন্ধ্যার পর পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে একের পর এক রঙিন ফানুস উড়ে যাচ্ছে খোলা আকাশে। রাতের আকাশের দিকে তাকালেই মনে হবে অসংখ্য তারার মেলা। এগুলো তারা নয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রবারণা উৎসবে এ পূর্ণিমায় আকাশছোঁয়া ফানুস। রংবেরঙের বর্ণিল কাগজে তৈরি বিচিত্র আকারের ফানুস। কোনোটিতে আঁকা ধর্মীয় চিহ্ন। কোনোটিতে লেখা শান্তির বাণী। শত শত ফানুসের আলোয় বর্ণিল হয়ে ওঠে আকাশ।

জানা গেছে, সিদ্ধার্থ যখন বোদ্ধিসত্ত্বরূপে শ্রাবন্তী নগর থেকে গৃহত্যাগ করেন, তখন অনুমাদ্ধর্শী নদী তীরে অবস্থানকালে অধিষ্ঠান করে নিজ চুলকে কর্তন করে ওপরের দিকে নিক্ষেপ করেন। সে চুল গুচ্ছ মহাতাবতিংস সর্গের প্যাগোডা হিসেবে স্থির আছে। তাই চুলামনি নামে প্যাগোডা উদ্দেশ্যেই পূজা এবং প্রদীপ প্রজ্বালন করতে ফানুস ওড়ানো হয়। এই স্মৃতি অমলিন করে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারেও কক্সবাজারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় উদযাপন করেছে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা।

বুধবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রবারণা পূর্ণিমার দ্বিতীয় দিনে কক্সবাজার শহরের জাদিরাম, বইল্যাপাড়া, পিটাকেট, থংরো ও অমেধা ক্যাং সংলগ্ন কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী মন্দির প্রাঙ্গণে স্বর্গের উদ্দেশে ওড়ানো হয় প্রায় শতাধিক ফানুস। জীর্ণতা মাড়িয়ে পরিশুদ্ধ জীবন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বানে মন্দির প্রাঙ্গণে মিলিত হয় সকল শ্রেণির ধর্মাবলম্বীর হাজারো মানুষ। রাখাইনরা রাতভর ফানুস উড়িয়ে তাদের বুদ্ধকে স্মরণ করেন। এ উৎসব ঘিরে বৌদ্ধপল্লির প্রতিটি ঘরে বিরাজ করছে বর্ণিল উৎসবের আমেজ। ঘরে ঘরে চলছে ধর্মীয় নাচ-গান, বুদ্ধের পবিত্র জীবনালোচনা ও আতশবাজি। বিহারগুলো সেজেছে নবরূপে। যেদিকে চোখ যায় সর্বত্র আলোকসজ্জা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ শিশু, যুবক-যুবতি, আবালবৃদ্ধবনিতা নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন করেন। সেখানে সুখ ও শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করে সবাই।

মংকিউ রাখাইন জানান, তারা এ বছর বুধবার রাতে ৫০টির বেশি ফানুস আকাশে ছেড়েছেন। এজন্য তাদের প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি জানান, ফানুস তৈরি করতে চাইনিজ রঙিন কাগজ, বাঁশ, সুতি কাপড়, ছাতার জাঙ্গা, কেরোসিন, মটিয়া তেল, সুতা, মোম, তার এসব প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এসব জিনিসপত্র দাম অনেক বেড়েছে। সাধারণত চার/পাঁচ ধরনের ফানুস তৈরি করেন রাখাইনরা। যার মধ্যে রয়েছে মালা ফানুস, প্যারাসুট ফানুস, বেনসান ফানুস, লেজ ফানুস, কেচা ফানুস উল্লেখযোগ্য।

কক্সবাজার রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেন থোয়েন (উসেনমি বাবু) বলেন, প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য আত্মশুদ্ধি, শুভ, সত্য ও সুন্দরকে বরণ করে অসত্য ও অসুন্দরকে বর্জন করা। আমি কামনা করি মানুষের অন্তর থেকে সব মলিনতা দূর করে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও দয়া জাগ্রত হোক।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে