​তিস্তার নদীর পানি কমলেও এক দিনের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২১, ২১:৪৩

স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী/ডিমলা প্রতিনিধি

 

 

তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়।

 

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকান্দার আলী জানান, এক দিনের সৃষ্ঠ বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় প্রায় ১৫শ ৫০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। নদীর পানি বৃহস্পতিবার কমতে শুরু করলে এখন পর্যন্ত ৫শ ৭৫ হেক্টর জমির ধান জেগে উঠেছে। অপরদিকে ১৭ হেক্টর সবজি ও আলুর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এসব জমির মধ্যে মাত্র ৩ হেক্টর জমির ফসল জেগে উঠেছে। এমনিভাবে চর এলাকার আগাম জাতের ভূট্রা ১৫ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। ওই কর্মকর্তা জানান, বন্যায় ক্ষতি প্রায় প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা।

 

অপর দিকে ডিমলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামীমা আকতার জানান, ডিমলা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৫০ থেকে ২০০টি মাছের খামার পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের লোকজন ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

 

এদিকে এক দিনের বন্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাসসহ মোট ৫টি বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১২ চর এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

এদিকে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, বুধবার আকস্মিকভাবে উজানের পাহাড়ী ঢলে সকাল ৯টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে দুপুর ৩টায় পানি বেড়ে  ৭০ সেন্টিমিটার মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 

পানির তীব্র শ্রোতে বুধবার সকাল ৯টায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রোয়েন বাঁধ বিধ্বস্থ হয়। এতে ওই এলাকার শতাধিক বসত ঘর, আসবাবপত্র, ফ্রিজ, টেলিভিশন ও মোটরসাইকেল পানিতে ভেসে যায়। এরপর সকাল ১১টায় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস সড়কের প্রায় ৩’শ মিটার ভেঙ্গে যায়। ফলে নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, একদিনের স্মরণকালের এই বন্যায়  নদী রক্ষার বাইপাস সড়ক, ৯টি স্পার্ক, ক্রস ও গ্রোয়েন বাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৗলা বলেন, তিস্তার পানি কমলেও বুধবারের বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুব হাসান বলেন, সরেজমিনে জনপ্রতিনিধিদের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে জানা গেছে পাঁচ হাজার পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে দুই হাজার ১০০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবারসহ চাল, ডাল ও তেল বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বন্যা মোকাবিলায় গতকাল ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বাকি পরিবারের মধ্যে একইভাবে খাবার বিতরণ করা হবে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দফতর থেকে ৪৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকায় আরও ১০ লাখ টাকা ও পাঁচ হাজার শুকনো খাবারের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

 

যাযাদি/ এস