বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

​ ফেনীতে পলিথিন বর্জ্যের দূষণে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

ফেনী প্রতিনিধি
  ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:৫৭

পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কমবেশি সকলেই জানি। তবে আমরা এ ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি সচেতন নয়। দেশে আইন করে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও এখনো পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধ হয়নি। গবেষকদের মতে পলিথিন অপচনশীল পদার্থ। তাই এর পরিত্যক্ত অংশ দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত ও অবিকৃত থেকে মাটি ও পানি দূষিত করে। মাটির উর্বরতা হ্রাস ও গুনাগুন পরিবর্তন করে। কৃষি ক্ষেত্রে পলিথিন সূর্যের আলো ফসলের গোড়ায় পৌঁছতে বাধা দেয়। ফলে মাটির ক্ষতি কারক ব্যাক্টেরিয়া না মারা যাওয়ায় জমিতে উৎপাদন কমছে।

পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিফিনাইল ক্লোরাইড পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বাতাস দূষিত করে। পলিথিনের পরিত্যক্ত ব্যাগ শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পলিথিন ও বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য ব্যাপক ব্যবহার ও যত্রতত্র ফেলে দেওয়ায় সারা দেশে রাস্তাঘাট, খাল বিল, নদী নালা থেকে শুরু করে সমুদ্র পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক ভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এর পর ও থেমে নেই পলিথিনের রমরমা ব্যবসা এবং নৈমিত্তিক ব্যবহার। নিষিদ্ধ হওয়ার পর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই ফেনী জেলার সর্বত্রই পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে। ক্ষুদ্র একটি জিনিস থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন বিক্রেতারা পলিথিনের ব্যাগে করেই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন।

ফেনীতে দীর্ঘদিন স্বাস্থসেবা দিচ্ছেন ডাঃ গোলাম মাওলা । এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, শুধু পরিবেশ নয়, পলিথিন মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। পলিথিন থেকে নির্গত হয় বিষফেনোল নামক বিষাক্ত পদার্থ, যা মানবদেহের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে চর্মরোগ, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে পলিথিন ব্যাগকে চর্মরোগের ব্যাগ বলে মনে করেন।

সিনিয়র সাংবাদিকএনএন জীবন বলেন, ফেনী শহরসহ জেলার সকল পৌর শহর ‍গুলোতে ড্রেনেজ সিস্টেমে সব সময় জ্যাম লাগিয়ে রাখা আবর্জনা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যার কারণ পলিথিন। পলিথিনের কারণে অন্যসব আবর্জনাও জট পাকিয়ে থাকে। তাই ফেনী শহরের যখন অপচন শীল পলিথিন রাস্তায় ফেলছেন, তা বহু বছর কোনো না কোনো ড্রেনে বা খালে আটকে থাকে কিংবা ফেনী নদী, মুহুরী নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীসহ আশপাশের কোনো খাল বা জলাশয়ে গিয়ে জমে থাকে। এ কারণেই পলিথিন বর্জ্যে শহরের চারপাশের খাল ও জলাশয়গুলো ভয়াবহ দূষণের শিকার।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) , ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, আইন অনুযায়ী, ক্ষতিকর পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধে তৎপরতা জোরদার করতে হবে। পলিথিনবিরোধী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে চটের ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহ জোগাতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার রোধে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। এ নিয়ে গণমাধ্যম গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিধায় এ নিয়ে সরকারের টেকসই পরিকল্পনা জরুরি।

উল্লেখ্য, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দশম স্থানে। সম্প্রতি এসডো নামক এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে, দেশে করোনা ভাইরাস মহা- মারিকালে এক বছরে ৭৮ হাজার টনেরও বেশি পলিথিন বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে।

সারা দেশের ন্যায় ফেনীতে ও আশংকাজনক হারে পলিথিন উৎপাদন এবং পলিথিন বর্জ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফেনীর উন্নয়ন সংস্থা ফেনী হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন- এফএইচডিএফ’ ও মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্মিলন-বামাস।

ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন , সড়ক ও ড্রেনের বর্জ্য অপসারণের জন্য আলাদা একটি টিম গঠন করা হয়েছে । তারা প্রতি ঘন্টায় বর্জ্য অপসারণে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে এমনটা হচ্ছে তাই পৌরসভার পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারনা অব্যহত আছে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে