ভেদরগঞ্জে ছাত্রদলের কমিটি চালাচ্ছেন বিবাহিতরা

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৫৯

ভেদরগঞ্জ প্রতিনিধি

ছাত্রত্ব নেই, পেরিয়ে গেছে বয়সসীমা। আবার বিয়ে করে ফেলেছেন অনেকেই,কেউ কেউ রয়েছেন প্রবাসেও, তাতে কী! তাদের নিয়েই ছাত্রদলের ভেদরগঞ্জ উপজেলা শাখা ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করেছে সংগঠনটি। আর এ খবর জানাজানির পরেই রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ঝড় বইছে।

 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাফায়েত ইসলাম অপু, নামে এক ফেইজবুক আইডির দেয়া পোষ্টের তথ্য মতে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভেদরগঞ্জ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ইমরান খানকে দিয়ে কমিটি পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু ওই ছাত্রদল নেতা ইমরান খান বিয়ে করেছে এক বছর আগে। বিবাহের নিকাহনামাহ তথ্যমতে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া এক লাখ টাকা উসিল রেখে ১৫ তারিখ ৫ মাস ২০২০ সালে মৃত শহীদুল্লাহ হাওলাদারের মেয়ে মাহিয়ার সাথে ইমরান খানের বিয়ে হয়েছিলো।

 

উপজেলা ছাত্রদলের সংগঠনটির সূত্র ও তথ্যমতে, শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাকিরের স্বাক্ষরে ২৪ মার্চ ২০২১ সালে একটি ১০ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেন। কোন কিছু বিবেচনা না করেই একাধিক বিবাহিত দের নিয়ে মাত্র ৬০ দিনের একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল। যদিও সাংগঠনিক নির্দেশনায় এই কমিটির মেয়াদ শেষ। করা হয়নি স্থায়ী কমিটি। তবে ছাত্রলের নেতা নির্বাচনে ভোটের আগে বিএনপির হাইকমান্ড বেশ কিছু নিয়ম ঠিক করে দেয়, তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিল বিবাহিত, অছাত্র এবং বয়স্করা ছাত্রদল করতে পারবেন না। কিন্তু সেটিও মানা হয়নি। কিন্তু নিজেদের সেই নিয়ম ভেঙ্গে বিবাহিত-বয়স্কদের দিয়েই ছাত্রদলের ভেদরগঞ্জ উপজেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করেছে সংগঠনটি।

 

সংগঠনটি থেকে অব্যাহতি নেওয়া যুগ্ন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল করি পড়াশোনা করি তাই। আমি জানি ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিবে শুধু ছাত্ররাই। সেখানে আমাদের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কমিটিতে রাখা হয়েছে বিবাহিত মালয়েশিয়া প্রবাসী, কাতার প্রবাসী, চাকরিজীবী, ঢাকা স্থানরত ব্যক্তিদের নিয়ে। তাই আমাদের কমিটি নামেই আছে কাজে কিছুই নয়। আমি এই কমিটি মানি না বিধায়  নিজ ইচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে নিলাম।

 

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, পূর্বে আমাদের আহ্বায়ক কমিটিতে ইমরান খানকে আহ্বায়ক করেছিলাম বটে, ইমরান বিবাহিত ছিল সেটা আমাদেরকে জানায়নি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে বিবাহিত ও অছাত্র,প্রবাসী, চাকরীজীবিদের থাকার কোন সুযোগ নেই, এখন যেহেতু ইমরান খান ও জসিম মাহমুদ সুজন বিবাহিত আমরা জানতে পেরেছি। তাদেরকে অতি বিলম্বে বহিস্কার করে আমরা বর্তমানে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে স্থায়ী কমিটি গঠন করবো।

 

এ ব্যপারে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, ইমরান গোপনে বিবাহ করেছিলো আমাদেরকে বলেনি।  এখন তার বিবাহিত বউকে মেনে নিচ্ছে না অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা শুনেছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কখনোই বিবাহিত দের ছাত্রদলের থাকার সুযোগ নেই। সংগনের আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিয়ে আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করবো।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুখে এক এবং কর্মে ভিন্নতার কারণে বিএনপির রাজনীতি আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তবুও তাদের পথচলার গতিপ্রবাহ বদলায়নি। তারই জ্বলন্ত প্রমাণ বিএনপির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের জ্যেষ্ঠজনদের দেখানো পথেই হাঁটছেন, সব রীতিনীতি ভেঙে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন অছাত্র-বিবাহিত ও বয়স্কদের দিয়ে। যা নিজেদের পায়ে নিজেদের কুড়াল মারা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

 

এ ব্যাপারে বিবাহিত ছাত্রদলের ভেদরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক ইমরান খানের মোবাইল একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

 

 

যাযাদি/ এমডি