শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খানসামায় খালবিল অবৈধ জালের দখলে, হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৮:০৫

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার দেশি মাছের আশ্রয় ও বংশবিস্তারের অন্যতম আধার নদীর নালা ও খাল অবৈধ জালের দখলে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মা মাছসহ ছোট বড় সব ধরনের মাছ। বছরের পর বছর ধরে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে প্রকাশ্যে এ নিধনযজ্ঞ চলমান রয়েছে। ফলে পুঁটি, কই, মাগুর, শিং, টেংরা, ডারকা, মলা, ঢেলা, শৌল, বোয়াল, আইড়, চিংড়ি, চ্যাং, টাকি, গতা, পোয়া, বালিয়াসহ প্রভৃতি দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার আলোকঝাড়ি, ভেড়ভেড়ী, আঙ্গারপাড়া, খামারপাড়া, ভাবকি ও গোয়ালডিহি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর নালা ও খালে মাছ মারার ফাঁদ বসিয়েছে কতিপয় মাছ শিকারি। যারা খড়া, বানা, দারকি, জোলেঙ্গা জাতীয় মাছ ধরার স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়মিত শিকার করছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।

স্বল্প দূরত্বেই ঘন ঘন এসব স্থাপনের কারণে ওই জলাধারগুলোর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ যেমন ব্যাহত হয়েছে তেমনি দেশি মাছসহ অন্যান্য উপকারী জলচর প্রাণীর বংশবিস্তার ও শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বাধাহীনভাবে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধন অব্যাহত থাকায় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে এসব স্থানের মাছের উৎপাদন।

আলোকঝাড়ি, খামারপাড়া ও ভাবকি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে অতিবাহিত আত্রাই নদী এবং আঙ্গারপাড়া ও গোয়ালডিহি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে ইছামতি নদী এবং ভেড়ভেড়ী, আঙ্গারপাড়া ও গোয়ালডিহি ইউনিয়নে বেলান নদী ও তার আশপাশে ছোট বড় নদীর নালা ও খালগুলোতে শত শত অবৈধ কারেন্ট জাল ও দারকি বসানো হয়েছে। এ কারণে জাল বসানোর স্থানে খাল ও নালায় বানা লাগিয়ে মাছের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রবহমান খাল ও নালা ছোট ছোট আবদ্ধ ডোবায় পরিণত হয়েছে।

ভেড়ভেড়ী হতে গোয়ালডিহি পর্যন্ত স্বাভাবিক গতিরোধ করায় বেলান নদীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় আশপাশের ফসলের ক্ষেত দিনের পর দিন জলমগ্ন থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হচ্ছে পচন। এতে পরিবেশ দূষণ ঘটছে। বিষাক্ত হয়ে উঠেছে পানি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেশি মাছের আস্তানা।

কয়েকজন মৎস্যচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণ বা জলাশয়গুলোর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মৎস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগই নেই। প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নেও কোনো ভূমিকা নেই। অবৈধ জালে খালবিল ছেয়ে গেলেও কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

পাকেরহাটের কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, বাজারে দেশি মাছের চাহিদা অনেক। দামও অনেক বেশি। তাই এসব মাছ চাষ করার প্রতি মাছচাষিদের আগ্রহ থাকতে হবে। আর দেশীয় মাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন বর্মন জানান, অবৈধ জাল ব্যবহার এমনিতেই অপরাধ। তার ওপর প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দেশি মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোতে এসব স্থায়ীভাবে বসানো গুরুতর বেআইনি কাজ। এ বছর বিভিন্ন হাটে-বাজারে ও জলাশয়ে অভিযান পরিচালনা করে এ যাবৎ প্রায় শতাধিক কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে সকলকে সচেতন হতে হবে। নতুবা দিন দিন এই মাছগুলো হারিয়ে যাবে।

যাযাদি/wএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে