​যাত্রাশিল্পী ধলু মালিদের খোঁজ রাখে না কেউ বাদাম বিক্রি করে চলে সংসার

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৫০

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

 

পটুয়াখালী শহরের অদূরে বাদুরা পশুর হাট। সবাই যখন গরু-ছাগল কিংবা মহিষ কিনতে দরদাম নিয়ে ব্যস্ত সে সময় কানে ভেসে আসে বাঁশের বাঁশির শুর। কৌতূহলী মনে কাছে গিয়ে দেখা যায় বুট, বাদাম বিক্রি করা একজন হকার বাঁশি বাজাচ্ছেন। বাঁশি বাদক এই ব্যক্তির নাম ধলু মালি, বয়স ৭৭-এর থেকে হয়তো বেশি কম হতে পারে। একসময়ে প্রতাপের সঙ্গে যাত্রাদলে অভিনয় এবং বাঁশি বাজালেও এখন আর সেসব যাত্রাদলের অস্তিত্ব নেই। তাইতো পেশা পরিবর্তন করে পেটের তাগিদে ফেরি করে বুট, বাদাম বিক্রি করে কোনোমতে চলে সংসার। তবে এরপরও বাঁশিকে আগলে রেখেছেন তিনি।

 

কথা হয় যাত্রাশিল্পী ধলু মালির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেক যাত্রাদলের অভিনয় করছি, বাঁশি বাজাইছি। বিশ্ব শ্রী নাট্য সংস্থা, কহিনুর অপেরা, জয়টুক অপেরা, ভোলানাথ অপেরা, বাবুল অপেরা, দ্বীপালি অপেরা, নিউ বাসন্তি যাত্রা দলের মতো বড় বড় দলে কাজ করেছি। সে সময় অনেক বই বিখ্যাত ছিল, যেমন গলি থেকে রাজপথ, একটি পয়সা, রিকশাওয়ালা, গরিবের মেয়ে, লাইলি মজনু, গুনাইবিবি, কাসেম মালা  আর সবগুলোতো এখন মনে নাই। আগে বাঁশি বাজিয়ে সংসার চললেও যাত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হিন্দুদের বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে বাজনা বাজাইতাম। কিন্তু গত দুই বছর করোনার কারণে সেই অবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে। বাজনা বাদ্য যা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর কি করব বাধ্য হয়ে বাজারে বাজারে বাদাম বিক্রি করি আর সুযোগ পাইলে বাঁশি বাজাই। বাঁশি বাজাইতে ভালো লাগে। মানুষও দাড়াইয়া বাঁশির সুর শোনে।’

 

এসব কথা বলতে বলতে ধলু মালি আবেগে কেঁদে ফেলেন, জীবনের সোনালি দিনগুলোর কথা মনে করলে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেন না। বড় একটি ছেলে আছে সে ঢাকায় একটি সেলুনে কাজ করে। ছোট ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে কি আর করবেন, কোনো উপায় না পেয়ে বাদাম বিক্রির টাকায় কোনো রকম জীবন চলছে তার।

 

গত কয়েক দশক থেকেই আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে অস্তিত্ব সংকটে থাকা যাত্রা দলের শিল্পীদের অনেকেই ভালো নেই।  অভাব অনটনে থাকা এসব মানুষগুলো অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। আর করোনার দুই বছর এসব মানুষদের জীবনকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পীদের সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও প্রকৃত পক্ষে বঞ্চিত এসব তৃণমূল পর্যায়ের শিল্পীরা। জেলায় কী পরিমাণ যাত্রাদল এবং কত মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যার ফলে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অসহায় এসব শিল্পীকে সহযোগিতার উদ্যোগ নিলেও প্রকৃতপক্ষে যারা প্রাপ্য তারা এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পটুয়াখালী শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা যায় করোনাকালীন দুই বছরে পটুয়াখালী জেলায় সরকার দুই দফায় ৫ হাজার টাকা করে মোট ৯০ জনকে ১০ হাজার টাকা প্রণোদনা প্রদান করেছে।

 

জেলা কালচারাল অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন সময় শিল্পীদের সহযোগিতা করে থাকে, তবে ধলু মালির বিষয়টি আমরা অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু এই গুণী মানুষটির বিষয়ে জানতে পারলাম, সে কারণে দ্রুত সময়ের  মধ্যে তাকে সরকারি সহযোগিতা এবং একটি সম্মানজনক পেশা নিয়ে তিনি যেন বেঁচে থাকতে পারেন সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।

 

যাযাদি/ এস