​ফুলবাড়ীতে স্বামীর উপর জিঁদ করেই ভোটযুদ্ধে একই পদে দুই সতীন

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৫৬

ইউনুছ আলী আনন্দ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

 

কুড়িগ্রামে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে ২৮ নভেম্বর। এ দিনটি সামনে রেখে এ জেলার উপজেলা গুলোতে চলছে শেষ সময়ে প্রার্থীদের প্রচারণা ও ভোটারদেরকে নিজের প্রতীকের দিকে আয়ত্বে নেয়ার জন্য ভোটযুদ্ধ।

 

এই ভোটযুদ্ধ এলাকা ভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে হলেও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের একই স্বামীর দুই স্ত্রীর মাঝে শুরু হয়েছে একই পদের ভোটযুদ্ধ। এখানে প্রায় ১২ হাজার ভোট রয়েছে।

 

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বুদারবান্নী গ্রামের ফজলু হক ফজু কসাইয়ের প্রথম স্ত্রী আঙ্গুর বেগম ও তৃতীয় স্ত্রী জাহানারা বেগমের মধ্যে এ ভোটযুদ্ধ চলছে। এরমধ্যে একই পদে আঙ্গুর বেগম (কলম) প্রতীকে ও জাহানারা বেগম (তালগাছ) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

 

দুই সতীনের এ ভোটযুদ্ধ পুরো জেলায় এক তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে। এলাকায় এ নিয়ে চাঞ্চল্যও দেখা দিয়েছে। ভোটারদের মাঝে যেমন সৃষ্টি হয়েছে কৌতুহল তেমনি প্রশ্ন। তবে দুই সতীনের ভোটযুদ্ধ মধ্যে জিতবে কে? প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর শুরু হয়েছে।

 

জানা গেছে, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বুদারবান্নী গ্রামের ফজলু হক ফজু কসাইয়ের তিন স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় স্ত্রী জাহানারা বেগম এলাকায় পরিচিত হওয়ায় গতবারের ইউপি নির্বাচনে তিনি স্বামী ফজলু হক ফজুর সর্মথন নিয়ে ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করেন।

 

সেবার মাত্র এক/দেড়শো ভোটের ব্যবধানে হেরে যান জাহানারা বেগম। এরপরও তিনি মাঠ ছেড়ে না দিয়ে এবারের নির্বাচনে একই পদে নির্বাচন করার জন্য কাজ চালিয়ে যান। মনোনয়ন সংগ্রহের আগেই বাধ সাধেন জাহানা বেগমের স্বামী ফজলু হক ফজু কসাই।

 

তিনি তার গ্রামে বৈঠক ডেকে জাহানারা বেগমকে নির্বাচন থেকে সরে আসার আহবান জানান। জাহানারার পরিবর্তে তার প্রথম স্ত্রী আঙ্গুর বেগমকে এ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। এতে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হন জাহানারা বেগম।

 

স্বামীর ঘোষণার পরেই বৈঠক মজলিসেই একই পদে নির্বাচন করার ঘোষণা ব্যক্ত করেন জাহানারা বেগম। এ সময় তিনি জানান, আমি ভোটের মাঠ ধরে রেখেছি। অথচ আমার মাঠে  ভোট করবে অন্যজন? আমার স্বামীসহ এলাকার ১০ জন আমার পাশে না থাকলেও ভোটের বাক্স আমার থাকবেই।

 

এরপর থেকেই স্বামী ফজলু হক ফজু কসাইয়ের উপর জিঁদ করেই গ্রামের পর গ্রাম ভোটারদের মন জোগাতে (তালগাছ) প্রতীক নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন গৃহবধূ জাহানারা বেগম। জাহানারা বেগমের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তার বড় সতিন আঙ্গুর বেগম তার (কলম) প্রতীকে ভোটারদেন সমর্থন নিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাকে প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন স্বামী ফজলু হক ফজু।

 

স্থানীয় ভোটার আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে দুই সতীনের ভোটযুদ্ধ স্বামীর কারনে সৃষ্টি হয়েছে। জাহানারা বেগমের স্বামী ফজলু হক ফজু গতবারের ভোটে পাশে ছিল। এবার তার পাশে না থেকে প্রথম স্ত্রীকে নির্বাচনে একই পদে দাঁড়িয়ে দেয়। এতেই দুই সতীনের ভোটযুদ্ধের সৃষ্টি।

 

টনকু মিয়া বলেন, আমরা জাহানারা বেগমের সাথে ভোটে কাজ করছি। সে গতবার থেকে ভোটের মাঠ ধরে আছে। দুই সতীনের মধ্যে জাহানারা (তালগাছ) প্রতীকে বিজয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

প্রতিক্রীয়ায় জাহানার বেগমের প্রতিদ্বন্দ্বী সতীন আঙ্গুর বেগম বলেন, আমার ছোট সতীন বিপক্ষে থাকলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার পাশে আমার স্বামী ফজলু হক ফজু ও এলাকার জনগণ আছে। আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করার আশা করছি।

 

অপর প্রতিদ্বন্দ্বী সতীন জাহানা বেগম বলেন, আমি গতবার নির্বাচনে আমার স্বামীর অনুমতি নিয়ে ভোট করেছি। স্বামী আমার পাশে ছিল। ভোট করবো বলে ভোটের মাঠ ধরে রেখেছি। তা আমার স্বামী তা জানতো।

 

অথচ মনোনয়ন নেয়ার কয়েকদিন আগে আমার পদে আমার সতীন আঙ্গুর বেগমকে ভোট করার অনুমতি দেয় স্বামী। এটা আমার উপর স্বামীর ষড়যন্ত্র। তারপরেও আমার দুঃখ নেই স্বামী পাশে না থাকলেও জনগণ আমার পাশে আছে। আমি জয়লাভ করবোই।

 

এ ব্যাপারে ফজলু হক ফজু বলেন, আমার তৃতীয় স্ত্রী জাহানারা বেগমের সাথে কোনো ঝগড়া বিবাদ নেই। তার সাথে শুধু ভোটের কারনে একটু সমস্যা। আমি ভোট করার জন্য আমার প্রথম স্ত্রী আঙ্গুর বেগমকে মনোনীত করার কারনে আমার তৃতীয় স্ত্রী আমার উপর জিঁদ করেই ভোটে দাঁড়িয়েছে।

 

যাযাদি/ এস