দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি : টানা বৃষ্টিতে মানুষের দূর্বিসহ ভোগান্তি

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪৮ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৫২

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

 

 

 

 

ফেরি সংকটের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দেশের ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার ব্যহত হওয়ায় ঘাট অভিমুখে নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে চরম বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন সংশ্লিষ্টদের জনজীবন।

 

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টির কারণে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের পন্টুনের ওঠার এ্যাপ্রোস সড়ক পিচ্ছিল হয়ে গেছে। এর ফরে যানবাহনগুলোকে ফেরিতে ওঠা-নামা করতে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে অত্যান্ত ধীরে ধীরে চলতে হচ্ছে। এতে প্রতিটি ফেরিতে লোড-আনলোডে স্বাভাবিকের চেয় বেশি সময় লাগছে। ফেরি সংকটের সাথে নতুন করে বৈরী আবহাওয়া যুক্ত হওয়ায় নদী পারের অপেক্ষায় দৌলতদিয়া ঘাট অভিমুখে আটকা পড়েছে শত শত বিভিন্ন যানবাহন। এতেকরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও যাবাহনের সংশ্লিষ্টদের।

 

বিআিইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটের ফেরি বহরে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। এর মধ্যে রোরো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও কেরামত আলী ফেরি দুটো সাময়িক মেরামতের জন্য পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় রয়েছে। অপরদিকে দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরিঘাটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ঘাটটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে, নতুন করে নদীতে নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ৬ নম্বর ঘাটটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ৩, ৪, ৫ ও ৭নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হলেও পানি কমে যাওয়ায় ফেরিঘাটের পন্টুনে যাওয়ার এ্যাপ্রোস সড়কগুলো নিচু হয়ে বেশ ঢালু হয়ে গেছে। এর ফলে গত দুই দিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে সড়কে কাদামাটি জমে অস্বাভাবিক পিচ্ছিল হওয়ায় যানবাহন লোড-আনলোডে দীর্ঘ সময় লাগছে।

 

সরেজমিন সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুড়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরোপয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দীর্ঘ সারি। এছাড়াও দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহসড়কেও অন্তত ২কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে পন্যবাহি ট্রাকের দীর্ঘ সারি। ফেরির নাগাল পেতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার যানবাহনগুলোকে ঘন্টার পর ঘন্টা এবং গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আটকে থাকা যানবাহনগুলোকে ২/৩ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

 

রয়েল এক্সপ্রেস নামের বাসের যাত্রী ফিরোজ ইসলাম বলেন, গত রোববার দিনগত রাত ২ টায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌছেছি, এখন বেলা সারে ১২টা বাজে, ফেরির নাগাল পাইনি, আর কখন পাব তাও জানিনা। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে বাইরে যাওয়ারও সুযোগ নেই।

 

 ট্রাক চালক আলমগীর হোসেন বলেন,  গোয়ালন্দ মোড়ে দুইদিন আটক থেকে গত রোববার বিকেলে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে সিরিয়ালে আছি। এ পরিস্থিতিতে আজকেও ফেরির নাগাল পাব কিনা জানি না। এইতো আমাদের জীবন, জানি ঘাটে আসলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হবে, তারপরও উপায় নেই, ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না।

 

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারি ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে বৃষ্টিতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পকেট পথগুলো পিচ্ছিল হওয়ায় ফেরি লোড-আনলোডে দীর্ঘ সময় লাগছে। বর্তমানে এ নৌরুটে ১৬টি ফেরির মধ্যে ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ফলে দৌলতদিয়ায় অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কে যাত্রীবাহি বাস ও পন্যবাহি ট্রাকের সারি সৃষ্টি হয়েছে।

 

যাযাদি/ এস