টাঙ্গাইল-৭ আসনে উপনির্বাচন: আশাবাদী নৌকার প্রার্থী,বিএনপির ভোটে আস্থা লাঙলের

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৪১

জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ রোববার (১৬ জানুয়ারি)। একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ১২১টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে তিন লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

 

নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুধু ব্যালট পেপার ব্যতীত কেন্দ্রে কেন্দ্রে আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি শনিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালের মধ্যে পৌঁছে গেছে।

 

এ উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলো- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খান আহমেদ শুভ (নৌকা), জাতীয় পার্টির জহিরুল ইসলাম জহির (লাঙল), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কমরেড গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী (হাতুড়ি), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির রূপা রায় চৌধুরী (ডাব) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু (মোটর গাড়ি)।

 

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) প্রচার- প্রচারণার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ তার নিজ ইউনিয়ন ঊয়ার্শী ও মির্জাপুর উপজেলা সদরে গণসংযোগ করেন। এছাড়া তার পক্ষে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন এলাকায় নৌকা প্রতীকে ভোটপ্রার্থনা করেন। জাপা প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির তার নিজ ইউনিয়ন ভাওড়াসহ মির্জাপুর পৌরসভায় গণসংযোগ করেন। এছাড়া জাপার নেতাকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তার পক্ষে লাঙল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির রূপা রায় চৌধুরী তার ডাব প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু তার মোটর গাড়ি প্রতীকে মির্জাপুর উপজেলা সদরে ভোটপ্রার্থনা করেন। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী কমরেড গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী তার নিজ ইউনিয়ন জামুর্কীতে হাতুড়ি প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।

 

নির্বাচন যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা চারবার দখলে রাখা আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীককে নির্বাচিত করতে দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা  ভোটের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। জেলা ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরাও মির্জাপুরের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালিয়েছেন। তারা মূলত টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের নজর কাড়তে তার ছেলে খান আহমেদ শুভর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করেন। তবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়ে নৌকার প্রার্থী খান আহমেদ শুভ অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।

 

অপরদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের আমছের আলীর ছেলে। তিনি ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে লাঙল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ২৮ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। এরপর জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক হওয়ায় দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেন। কিন্তু উপনির্বাচনের চিত্র ভিন্ন। বিএনপি মাঠে না থাকায় তাদের ভোটে আস্থা রেখেছেন তিনি। আসনটি দখলে নিতে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। জাতীয় পার্টির নিজস্ব ভোটের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে গিয়ে লাঙলে ভোট দিলে আসনটি তারা দখলে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন।

 

সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে তারা ভোট দিতে নির্বাচন কমিশনের মক ভোটের মাধ্যমে ইভিএম পদ্ধতি রপ্ত করেছেন। এ আসনের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীই এগিয়ে রয়েছেন। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। ইভিএম পদ্ধতির ভোটে মূলত আওয়ামী লীগের নৌকা ও জাতীয় পার্টির লাঙলের মধ্যে লড়াই হবে। তারা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে জানান।

 

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭০ হাজার ৫০১ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৭৮ জন। এছাড়া পাঁচজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

 

এ আসনে মোট ১২১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৬৪টি সাধারণ কেন্দ্র। নির্বাচনে ভোট কক্ষ থাকছে ৭৫৬টি। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ এবং আনসার সদস্য মিলে ১৭-১৮ জন দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে র‌্যাব এবং ডিবির টিমও কাজ করবে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) বিকাল থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মাঠে কাজ করছে।

 

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ জানান, জয়ী হওয়ার বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ সরকার মির্জাপুরে অনেক উন্নয়ন করেছে। প্রয়াত সংসদ সদস্য এ আসনকে সাজাতে অনেক কাজ হাতে নিয়েছিলেন। যার অনেক এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। তার রেখে যাওয়া অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়ন ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তার জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মির্জাপুরের মানুষ তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করবেন।

 

জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির জানান, প্রচারণা চালাতে গিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালের চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছেন। সাধারণ মানুষ তার পক্ষে রয়েছেন। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসেনি তাই তাদের ভোটও তিনি পাবেন বলে আশা করছেন। একই সঙ্গে মির্জাপুরে তার একটা ক্লিন ইমেজ রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের প্রার্থী কমরেড গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী জানান, সারা উপজেলায় তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার আশা করেন। 

 

বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী রূপা রায় জানান, এ আসনে তিনিই একমাত্র নারী প্রার্থী। প্রচারণাকালে তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানকার নারী-পুরুষরা তার পক্ষে কথা বলেছেন, সমর্থন করেছেন। নির্বাচনে কারচুপি না হলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার আশা করেন।

 

মোটরগাড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু জানান, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ এ আসনে এবারই প্রথম। নারী ভোটাররা ইভিএম সম্পর্কে তেমন ভালো জানেন না। তারপরও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশবাদী।

 

এ আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডিএম শফিকুল ইসলাম জানান, এ নির্বাচন কমিশনের সকল নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। এ উপনির্বাচনও বিএনপি বর্জন করেছে। সেজন্য দল, সহযোগী সংগঠনসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচন সংক্রান্ত সব কাজে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ভোট দেওয়া বা না দেওয়া অথবা তারা কাকে ভোট দেবেন- সেটা সম্পূর্ণই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

 

সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে এ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ ভোটররা যাতে সহজেই ইভিএমে ভোট দিতে পারে সে লক্ষ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মক ভোটিং কার্যক্রম করা হয়েছে।

                 

যাযাদি/ এমডি