শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১০ হাজার টাকার জন্য প্রাণ গেল ঢাবি অধ্যাপক সাঈদার

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ২০:১৪

সাঈদা গাফফার ১১ জানুয়ারি বিকেলে তাদের গাজীপুরের প্লটের গাছ বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা রাখেন তার সঙ্গে থাকা পার্সে। ওই টাকা ছিনিয়ে নিতেই অধ্যাপক সাঈদা গাফফারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুল ইসলাম। পরে লাশ ঝোপের ভিতর ফেলে ওই টাকা, সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল নিয়ে গাইবান্ধায় পালিয়ে যায়। প্রাথমিক জ্ঞিাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর সাঈদা গাফ্ফারের ঘাতক রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুল ইসলাম (২৫)।

আনোয়ারুল ইসলামকে গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ গ্রাম থেকে আটক করে গাজীপুর মহানগর ডিবি ও কাশিমপুর থানা পুলিশের একটি দল। শনিবার তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জ্ঞিাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গাজীপুর মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাঠায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দীপংকর রায়।

দীপংকর রায় জানান, মঙ্গলবার বিকেলে নির্মাণাধীন বাড়ির প্লট থেকে ১০ হাজার টাকায় ৫টি গাছ বিক্রি করেন অধ্যাপক সাঈদা গাফফার। গাছ কাটেন রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুল। গাছকাটা শেষ হলে সন্ধ্যায় নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পানিশাইলের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন প্রফেসর সাইদা। ওই সময় রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুলকে তার পিছন পিছন যেতে থাকে। পথে ১০ হাজার টাকা থেকে কিছু টাকা চান আনোয়ারুল। কিন্তু অধ্যাপক সাঈদা ওই টাকা দিতে অস্বীকার করলে পিছন থেকে সাঈদা গাফফারের মুখ চেপে ধরে সে। এরপর গলার ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তাকে। পরে তার লাশ ঝোপের ভেতর ফেলে আনোয়ারুল প্রথমে সাঈদার ভাড়া বাসায় গিয়ে আলমারি খুলে টাকাপয়সার খোঁজ করে।

পরে পালিয়ে শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী গিয়ে রাত্রিযাপন করে। বুধবার সকালে সে নিজবাড়ি একই জেলার সাদুল্যাপুরের জাউলিয়া গ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করে। বৃহস্পতিবার পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার খোঁজে ওই গ্রামে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে একটি মোটরসাইকেলে পালানোর সময় রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে অধ্যাপক সাঈদার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ১০ হাজার টাকার মধ্যে দুই হাজার ৬৫০ টাকা এবং মোবাইল ফোন দুটি উদ্ধার করেছে। সে মাদকাসক্ত এবং বখাটে। নিয়মিত গাঁজা সেবন করে। সে দুটি বিয়ে করেছে।

মাদকাসক্ত হওয়ায় প্রথম স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। হত্যার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না এবং আলমারি থেকে টাকা বা মূল্যবান কিছু নিয়েছে কি না তা জানতে আনোয়ারুলকে শনিবার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে বিচারক মেহেদী পাভেল সুইট তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একমাত্র ছেলে ব্যাংকার সাউদ বিন ইফতেখার জহির (৪৭) জানান, ময়নাতদন্তে শেষে শুক্রবার রাতে ঢাকার মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, তার মা অধ্যাপক সাঈদা গাফফার (৭১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হিসেবে ২০১৬ সালে অবসর নেন। বাবা জহিরুল হকও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারা তিন বোন এক ভাই। দুই বোন অস্ট্রেলিয়ায় বাস করেন। এক বোন ও তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি পুরান ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষকদের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে বাবা-মা’র ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এলাকাটি এখনো বসতি গড়ে ওঠেনি। ঝোপ-জঙ্গলে পরিণত হয়ে আছে। সম্প্রতি তার মা সেখানে ভাড়া থেকে ওই প্লটে একটি বাগানবাড়ি নির্মাণ কাজ করাচ্ছিলেন। বাড়ির একতলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। কাজ দেখাশোনার জন্য তার মা প্লটের অদূরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার তার মাকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বোন মোবাইল ফোনে মেসেজ করেন। কিন্তু তার মা মেসেজ না দেখায় পরদিন বুধবার ফোন করেন।

ফোন বন্ধ থাকায় ঢাকার বড় বোন সাদিয়া আফরিন (৪৮) ও তার মামা শেখ শমসের গাফফার মায়ের পানিশাইলের বাসায় গিয়ে ঘরের দরজা ও আলমারি খোলা দেখতে পান। অনেক খুঁজেও মাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। ওইদিন রাতেই থানায় তার বোন কাশিমপুর থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ আনারুলকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে শুক্রবার দুপুরে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মায়ের লাশ হাউজিং এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে