শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক বছরে ৩৫ বেওয়ারিশ লাশ দাফন

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ২১:১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিষ্ঠার ১ বছরের মধ্যেই ৩৫টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া “বাতিঘর” নামে একটি সামাজিক সংগঠন। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পরিচয়হীন কোন লাশ এলেই ডাক পড়ে বাতিঘর সদস্যদের।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করা “বাতিঘর” এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মতো ‘পরিচয়হীন’ ও ‘স্বজনহীন’ লাশ দাফন করেছে। “ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর” এখন পরিচয়হীন ও স্বজনহীন লাশ দাফনে শেষ ঠিকানা। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া একাধিক ব্যক্তির লাশ দাফনেও সহায়তা করেছেন বাতিঘর এর সদস্যরা।

“বাতিঘর” এর কয়েকজন সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্তদের লাশ দাফনে সহায়তা করতে তারা “বাতিঘর” নামে একটি সামাজিক সংগঠন গঠন করে। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

লিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস’র এরিয়া ম্যানেজার মোঃ আজহার উদ্দিন সংগঠনটির কর্ণধার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও চিকিৎসক রয়েছেন সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে। পরিচয়হীন লাশ পাওয়া গেলে এর দাফন সম্পন্ন করা হলো সংগঠনটির প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া কেউ স্বজনহীন কিংবা অসহায় হলেও দাফন কাজে সহায়তা করেন তাঁরা।

পৌর এলাকার মেড্ডা তিতাস নদীর পাড়ে লাশ দাফন করা হয়। সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে উদ্ধার হওয়া দু’জনের লাশ দাফন করেন ‘বাতিঘর’ এর সদস্যরা।

সংগঠনের সদস্যরা জানান, মূলত ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া লাশগুলোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেওয়ারিশ হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে নবজাতকের লাশও পাওয়া যায়।

হাসপাতাল সূত্র, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে খবর পেয়ে তাঁরা লাশ দাফনের কাজে এগিয়ে আসেন। হাসপাতালের মর্গে থাকা লোকজন এক্ষেত্রে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেন। বেওয়ারিশ লাশ এলেই তারা বাতিঘরকে আহবান জানান দাফন কাজ করে দেওয়ার জন্য। বাতিঘরের সদস্যরা ধর্মীয় বিধি মেনে জানাজা পড়িয়ে তাদের লাশ দাফন করে।

বাতিঘরের সদস্য মোঃ তানভীর আহমেদ বলেন, আমি খোঁড়ার দায়িত্ব পালন করি। এমন কাজ করতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগে। যত ব্যস্তই থাকি চেষ্টা করি সহায়তা করতে। সম্ভব না হলে অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে কাজটা করিয়ে দেই।

বাতিঘরের কর্ণধার মোঃ আজহার উদ্দিন বলেন, মূলত করোনায় মৃতদের দাফনের জন্যই বাতিঘরের প্রতিষ্ঠা। ওই সময় করোনায় মৃতদের দাফনে স্বজনদেরকে বেগ পেতে হতো। দাফনের জন্য লোক পাওয়া যেতো না। তখন আমরা এগিয়ে আসি। এখন নিয়মিত বেওয়ারিশ লাশ দাফন করি আমরা। তিনি বলেন গত ১ বছরে আমরা ৩৫টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছি।

তিনি বলেন, লাশ দাফনে সরকারিভাবেও বরাদ্দ থাকে। কিন্তু আমরা সেদিকে তাকিয়ে থাকি না। নিজেদের টাকায় সব কিনে ফেলি। আমার আয়ের টাকা এখানে ব্যয় করা হয়। কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে ফেলা হয়েছে। খবর পাওয়া মাত্র কাফনের কাপড়সহ অন্য সব কেনা হয়। এ জন্য আলাদা আলাদা টিম রয়েছে। কেউ কবর খুড়বে, কেউ কাপড় কিনবে, কেউবা লাশ নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে, কেউ দাফনে সহায়তা করবে। জানাজা পড়ানোর জন্যও একজনকে রাখা হয়েছে। আগে দিন রাতের যেকোনো সময় লাশ দাফনের কাজ করা হতো। তবে বিভিন্ন কারণে এখন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে লাশ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গের ইনচার্জ মোঃ সুমন ভূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে পরিচয়হীন লাশের দাফন কাজ করা হতো। কিন্তু একটি সমস্যার কারণে সংগঠনটি এখন আর কাজ করছে না। এ অবস্থায় বাতিঘর এর মাধ্যমে লাশ দাফনের কাজ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ ফায়েজুর রহমান ফয়েজ বলেন, আগে হাসপাতালে আসা পরিচয়হীন লাশ দাফনে প্রায় সময়ই নানা সমস্যা দেখা দিতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই। পরিচয়হীন লাশের খবর পেলেই ছুটে আসেন বাতিঘরের সদস্যরা। বাতিঘরের উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমার পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে