লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার মান বেড়েছে দ্বিগুণ

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:০৩

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

 

 

দীর্ঘ কয়েক যুগ পর হলেও আলোর মুখ দেখছে বান্দরবানের লামা উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বদলে গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবার চিত্র। যোগ হয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লোকবল। সংকট কাটিয়ে সচল হয়েছে প্রসূতি মায়েদের জন্য অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) বিভিন্ন যন্ত্রগুলো। নরমাল ডেলিভারি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রসূতি মায়েদের সেবার মান ডিঙ্গিয়েছে জেলা সদর হাসপাতালকে, এমনটি অভিমত ব্যক্ত করেছেন সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষরা।

 

জানা গেছে, ৫০ শয্যবিশিষ্ট লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসার স্থল। কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন অনিয়ম, অবহেলা ও প্রয়োজনীয় লোকবলসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতির অভাবে ভোগান্তির শেষ ছিল না চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। সামান্য জটিলতা হলে দেখা গেছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানোর হিড়িক। বিশেষ করে জটিলতা নিয়ে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে। লোকবলের অভাবে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বিশেষায়িত অপারেশন থিয়েটারে যন্ত্রপাতি ধুলাবালি জমে অকার্যকর হয়ে পড়ার পথে বসেছিল।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী ২০২১ সালের মার্চ মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় বদলে গেছে হাসপাতালের চিত্র। প্রতিদিন বহির্বিভাগে সাড়ে ছয়শ ও আন্তঃবিভাগে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ। লোকবল নেই তারপরেও হাসপাতালের ২টি ইসিজি মেশিন সমস্যা সমাধান করে ইনডোরে ভর্তি রোগীরা বর্তমানে বিনামূল্যে সেবা পাচ্ছেন। যা পাশর্^বর্তী উপজেলা আলীকদম থেকেও বিভিন্ন রোগী ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাফি সেবা পাচ্ছে। যেখানে বেসরকারি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে ১ হাজার টাকা ব্যয় হতো এখন সরকারিভাবে মাত্র ১১০ টাকায় রোগীরা পাচ্ছেন ভালো সেবা।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সূত্রের মতে, গত ২০২০ সালে প্রসূতি মায়েদের নিরাপদ প্রসব  সেবা (নরমাল ডেলিভারি) হয়েছে ১৫২ জন, যা ২০২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬১ জন। এছাড়া গত ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রসূতি মায়েদের জরুরি প্রয়োজনে নভেম্বর মাসে দুজন ও ডিসেম্বর মাসে ১৪ জন মাকে নিরাপদ অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হয়েছেন। উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় ৮/৯ বছর আগে অস্ত্রোপচারের সকল যন্ত্রপাতি সংযোজিত থাকলেও জনবল সংকট, লজিস্টিক সরবরাহ না থাকায় কোনো অপারেশন হয় নাই। অপারেশন বিভাগে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন, গাইনি কনসালটেন্ট ডা. মাকসুদা বেগম ও এনেস্থেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. নূর মুহাম্মদ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, মিডওয়াইফ, নার্স দ্বারা নিয়মিত জরায়ু-মুখ পরীক্ষা (ভায়া) করা হচ্ছে। করোনা টিকাসেবা পেয়েছে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া নতুন করে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৭০১৭ জন শিক্ষার্থীকে কোভিড-১৯ ফাইজার টিকার আওতায় নিতে সক্ষম হয়েছেন।

 

এছাড়াও হাসপাতালের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সুন্দর পরিবেশের জন্য ফুলের বাগান দিয়ে চারদিকে বাউন্ডারি করা হয়েছে। প্রত্যেকটা ওটি রুম সাজানো গোছানোসহ হাসপাতালের ভবন মোরামত করা হয়েছে। এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি ও জরুরি সেবার জন্য বসানো হয়েছে বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা। এখন প্রতি মাসে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার রোগী সেবা পাচ্ছেন।

 

যাযাদি/এসআই