নীলফামারীতে টিসিবি’র পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে অনেকেই
প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২২, ২০:০১
‘সকাল দশটা থাকি এইঠে আছি। তাও কোন নিবার পানু না। হামার পরে যায় আসিল ওইলা মানসি নিয়া গেলো।’ এরআগোত আরো একদিন আসিছুনু তাও নিগির পাও নাই’। টিসিবি’র সাশ্রয়ী মুল্যে ভোজ্য তেল না পেয়ে এভাবে আক্ষেপ করে বলছিলেন জেলা সদরের রামনগর এলাকার তাহেরা বেগম(৫৫)। আরেকজন মারুফা আকতার। তিনি এসেছেন কচুকাটা এলাকা থেকে। সকাল থেকে লাইন ধরি আছি। লাইনোতে খাড়ে আছি। নিবার আর পাইনো না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার গরীব মানুষের জন্য কমদামে চিনি, ডাল, তেল বিক্রি করছে, কার জিনিস যে কায় পায়ছে কবারে পাইছি না। অভিযোগ করলেও এভাবে তাদের খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে বাড়িতে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখা গেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি) এর পণ্য সংগ্রহে দীর্ঘ লাইন।
জেলা শহরের সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে প্রায়ই দেখা যায় এরকম দীর্ঘ লাইন। সকাল থেকে দেখা মিলবে ব্যাগ হাতে শত শত মানুষের উপস্থিতি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, একটি সিন্ডিকেট রয়েছে পণ্য সংগ্রহে। তারা প্রতিদিনই পণ্য সংগ্রহ করে। আর অনেকেই বঞ্চিত হয় সরকারের এই কমদামের এই পণ্য সংগ্রহে।
বাজারে ভোজ্য তেল প্রতি কেজি ১৬০টাকা, চিনি কেজি ৭৭টাকা, মশুর ডাল ৯৬টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় ভীড় বেশি দেখা গেছে টিসিবির ভ্রাম্যমান পণ্যের দোকানের সামনে।
এখানে পেয়াঁজ ৩০টাকা, তেল ১১০টাকা, মশুর ডাল ৬০টাকা এবং চিনি ৫৫টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় চাহিদাটা মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষদের বেশি।
তবে যারা পণ্য কিনতে এসেছেন তাদের অধিকাংশেরই মুখে ছিলো না মাস্ক বা তাদের মাস্ক ব্যবহারের উপর গুরুত্বও দেয়নি বিক্রয়কারী রব্বানী ট্রেডার্স।
পণ্য কিনতে আসা ব্যক্তিরা বলছেন, গাড়ি আসার সাথে সাথে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। আগে যে যেভাবে ছিলো তখন আর সেভাবে কেউ থাকে না। এমন সময় ¯িøপ দেয়া হয় কিছু। তারা পণ্য নিয়ে থাকেন।
শরিফুল হক নামের এক ব্যক্তি জানান, অনেক মানুষ এসেছে। তারা তো সবাই কিনতে পারবে না। এখানে কোন শৃঙ্খলা নেই। এখানে মনে হয় সিন্ডিকেট আছে। প্রশাসনের এটি দেখা উচিত। অনেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে।
বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান রব্বানী ট্রেডার্সের কর্মীরা জানায়, বুধবার মশুর ডাল চার’শ কেজি, পিয়াঁজ ৬’শ কেজি, চিনি দুই’শ কেজি ও তেল ৬’শ লিটার বিক্রির জন্য খোলা ট্রাকে আনা হয়। এর সুবিধা পাবেন তেল তিন’শ জন, মশুর ডাল দুই’শ জন, চিনি এক’শ জন এবং পেয়াঁজ তিন’শ জন।
গাড়ি আসার পর টোকেন দেয়া হয় উপস্থিত মানুষদের মাঝে। সাড়িবদ্ধ অবস্থায় থাকা মানুষরা এই টোকেন পেয়ে থাকেন টোকের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করা হয়।
বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী গোলাম রব্বানী জানান, চাহিদা অনেক সবাইকে তো আমরা দিতে পারি না। আমরা হয়তো তিন’শ মানুষকে দিতে পারবো। কিন্তু মানুষ আসেন পাঁচ’শ। তারপরও আমরা চেষ্টা করি সবাইকে দেয়ার জন্য।
তিনি জানান, শহরে ছয়জন ডিলার রোটেশন অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করে থাকেন শহরের বিভিন্ন স্থানে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে টিসিবি গোডাউন থেকে পণ্য নিয়ে এসে ডিসি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আজাহারুল ইসলাম জানান, কারা পণ্য নিচ্ছেন তাদের মাস্টার রোল নিয়ে থাকি আমরা। একজন যাতে ডাবল না পান সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যদি কোন অভিযোগ উঠে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
জেলায় ২৪জন ডিলার রয়েছেন এরমধ্যে ছয়জন জেলা শহরে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রয় করে থাকেন। একেকদিন একে স্থানে তারা বিক্রি করেন। তবে বিক্রয়কারী নজরদারী আরো বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
যাযাদি/ এস