পাকেরহাট ইনফিনিটি ক্লিনিকে সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যু, কর্তৃপক্ষের দাবি জ্বীনের দোষ
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০৮
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট ইনফিনিটি ক্লিনিক ও কনসালন্টেশন সেন্টারে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ক্লিনিকে রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসক না থাকায় সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি ক্লিনিকে দোষ-দোষী থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রসূতির পরিবারের সাথে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারী শনিবার উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ভাদুশাহ্পাড়ার নুরজামাল ইসলাম লালুর স্ত্রী রফিকা আক্তার (২০) এর প্রসববেদনা শুরু হলে প্রথমে গোয়ালডিহি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে ঐ কেন্দ্রের কর্মরত তাহেরী আক্তার প্রসূতির সমস্যা গুরুতর বলে ইনফিনিটি ক্লিনিকে ভর্তির পরামর্শ দেন ও ভর্তি করান। ক্লিনিকে ভর্তির পর কর্মরত নার্সরা বিকেল থেকে চিকিৎসা দেওয়ার পরে রাতে চিকিৎসকের দেখা মেলে। পরবর্তীতে মধ্যরাতে ডাঃ জেড রহমান সুমন নিজেই সার্জন ও এনেস্থিসিয়া হিসেবে ও তার ড্রাইভার রাজকুমারকে সহকারী হিসেবে সাথে নিয়ে প্রসূতির সিজার করে চলে যান। এরপর প্রসূতির বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে প্রসূতিকে নার্স ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা প্রদান করেন। এরপরও প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন হলে
রাত ৪টার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ছাড়পত্র ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ না দিয়েই মাইক্রো ম্যানেজ করে দিয়ে দিনাজপুর এম.আঃ রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদ্য প্রসবকারী ছেলে সন্তানকে রেখে প্রসূতির মৃত্যু হয়। এর আগেও ভুল চিকিৎসার ফলে কয়েকজনের মৃত্যু ও ভোগান্তির কথা জানান ভুক্তভোগী পরিবার।
প্রসূতির স্বামী নুরজামান ইসলাম লালু বলেন, সিজারের পূর্বে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোন সমস্যার কথা না বললেও সিজারের পর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে দিনাজপুরে পাঠান। সেখানকার চিকিৎসকরা ক্লিনিকে সঠিক চিকিৎসা হয় নি বলে জানান।
অপারেশনকারী সার্জন ডাঃ জেড রহমান সুমন ও তার সহকারীর মুঠোফোন ও ক্ষুদে বার্তায় একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।
ক্লিনিক পরিচালক ইমতিয়াজ হোসেন জানান, ঘটনাটি তেমন গুরুতর নয়৷ প্রসূতির আগে থেকেই নানা সমস্যা ছিল। তবে ক্লিনিকে জীন-ভূতের আছর থাকায় প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কাম্য নয়।
পাকেরহাট ইনফিনিটি ক্লিনিকসহ অনিবন্ধিত এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্বীন-ভূতের আছর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।
যাযাদি/ এস