শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

​​​​​​​শিকলবন্দি কায়সারকে নিয়ে পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৩৪

দরজাবিহীন টিনের ছাপড়া ঘরের মধ্যের খুঁটিতে শিকলে বাঁধায় কাটছে সারারাত। আর বাড়ির পাশের আমগাছের নিচের খুটির সঙ্গে বাম পায়ে শিকলে বাঁধা থাকে আবু কায়সারের সারাদিন। এভাবেই ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী অবস্থায় বসবাস তার। এখানেই তাকে খেতে, ঘুমাতে ও গোসল করতে হয়। এমনকি প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দিতে হয় শিকল বন্দী অবস্থায়। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের লুৎফল্লাহ-র ছেলে আবু কায়সারের বর্তমান বয়স ১৭ বছর। ৪ বছর বয়সে মানসিক বিকারগ্রস্থ বা অস্বাভাবিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার মধ্যে। একই সাথে সে বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী।

জানা যায়, জন্মের প্রথম দিকে খুব বেশি সমস্যা ছিল না আবু কায়সারে। ছোট শিশু এমন করবেই এ ধারণায় প্রথম দিকে চিকিৎসা করানো হয়নি। আস্তে আস্তে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে সে। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে দিন দিন অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যায় কায়সারের। ৪ বছর বয়সে তাকে শিকল বন্দী করা হয়। সংসারের সবার জীবন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। শুধু কায়সারের জীবনটাই শিকল বন্দী। চিকিৎসার অভাবে বন্দী দশা হতে মুক্ত হওয়ার যেন আর কোন উপায় নেই তার। চিকিৎসা ভার বহন করার মত সামর্থ্য তাদের পরিবারের কারোর নেই। পৈত্রিক বসতবাড়ি না থাকায় সরকারি জমিতে বসবাস তাদের। রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করা কায়সারের জন্য নতুন ছাপড়া ঘর তুলতেও বাঁধা দেয় বনবিভাগ।

কায়সারের বাবা লুৎফল্লাহ বলেন, একটি ফার্মেসীতে নাইটগার্ডের সামান্য বেতনের চাকরি করে কোনোমতে টেনেটুনে সংসারের খরচ জোগান দিতেই কষ্ট। সেখানে অসুস্থ ছেলের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো কোত্থেকে। কায়সারের প্রতিবেশী মোল্লাবাড়ী জামে মসজিদের মোতোয়াল্লী হাজী শাহাব উদ্দিন জানান, কয়সারকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে সে সুস্থ হয়ে যাবে বলে ডাক্তারদের মতামত। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে তার চিকিৎসা মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করে স্থানীয় ইসমাঈল হোসেন বলেন, এমন একটা ফুটফুটে শিশুর জীবন দিনকে দিন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় কাউন্সিলর আঃ সাহিদ সরকার বলেন, অনেক দিন আগেই আবু কায়সারের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তার জন্য যেকোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রণয় ভূষণ দাস যায়যায়দিনকে বলেন, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে কায়সারের অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভবনা আছে। তবে, এটি একটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটা চিকিৎসা প্রক্রিয়া। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, কায়সার প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। পরবর্তীতে সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা আসলে অবশ্যই তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

যাযাদি/এসআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে