​​​​​​​মহেশপুরে কুল চাষ করে স্বাবলম্বী ৮শ পরিবার

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৪১

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

 

 

ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাউকুলের গ্রাম খ্যাত ভাটপাড়ায় বাউকুল (বরই) চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে প্রায় ৮শ পরিবার মাঠের পর মাঠ বাউ কুল বাগান কেউ বা নিজের জমি আবার কেউ অন্যের জমি লীজ বা বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন বাউকুল প্রতিদিন  / ট্রাক ভরে কুল যাচ্ছে ঢাকা,চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে  এই গ্রামের ৯শ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৮শ পরিবারই বাউ কুল চাষের সাথে জড়িত  গ্রামের প্রায় হাজার বিঘা জমির মধ্যে হাজার ৪শ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে এই কুল কৃষকরা প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করছে  কৃষি অফিসের সুত্র মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাউ কুল চাষের গ্রাম এটি স্থানীয়রা ভাটপাড়া গ্রামটিকে কুলের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত করেছে

 

সরেজমিনে বাউকুল মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের দিকে এই গ্রামের স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক কৃষক তাজু উদ্দিন  মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমে দেড় বিঘা জমিতে বাউ কুল চাষ করেন সেই বছর তিনি কুল বিক্রি করে বেশ টাকা পান এর পর কুল চাষে আগ্রহ বেড়ে যায তার পরের  বছর আরো বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন  এর পর  ডা: তাজু উদ্দিনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার দেখা দেখি শুরু হয় বাউ কুলের চাষকুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অধিকাংশ চাষী কেউ কিনেছেন জমি, মটরসাইকেল, কেউ বা তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি  গ্রামের এনামুল হকের বিঘা, তাজ উদ্দিন এর বিঘা, সোহরাব  উদ্দিনের ১৫ বিঘা, সবুজ উদ্দিনের বিভাগ, ফারুক হোসেনের বিঘা, সিপনের বিঘা, মেহেদীর বিঘা, ফারুক এর বিঘা, এপিয়ারের বিঘাসহএই  গ্রামের প্রায় ৮শ পরিবারের কুলবাগান আছে প্রতিদিন প্রায় হাজার নারী-পুরুষ কাজ করছে এইসব বাগানে

 

প্রথম কুল চাষী গ্রাম্য ডা: তাজু উদ্দিন জানান, প্রথম বছরে তিনি দেড় বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন  কুল চাষ একটি লাভজনক ফসল কারো যদি এক বিঘা জমিতে কুল তাকে তাহলে সব খরচ বাদে থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব এখন তার বিঘা জমিতে কুল আছে তার দেখা দেখি এখন প্রায় হাজার ৪শ বিঘা জমিতে বাউকুল বলসুন্দরী চাষ হচ্ছে তিনি বলেন বাউ কুল মুলত - মাসের ফসল  যে জমিতে কুল চাষ করা হয় সেই জমিতে বোরো ধান কিংবা কলাই চাষ করা যায়

 

বাউকুল চাষী লিটন জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি বাউকুল পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে আর বলসুন্দরী কুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে ঢাকার  পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কুল  ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছে তিনি আরো বলেন, এক বিঘা জমি থেকে ৯০ থেকে ১০০ কাটুন কুল সংগ্রহ করা যায় বলসুন্দরী কুল চাষী ফারুক জানান, এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয় মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার  টাকা বাউ কুলের চাইতে বর্তমানে বলসুন্দরী কুলের দাম একটু বেশি সে কারনে বাউকুলের পাশাপাশি চাষিরা বলসুন্দর কুল চাষ করতে শুরু করেছে

 

মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রাম বাউ কুল চাষের জন্য বিখ্যাত প্রতিদিন - ট্রাক ভরে কুল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে কৃষকরা বাউকুল চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে বাউকুলের পাশাপাশি চাষিরা বলসুন্দরী কুল চাষ করতে শুরু করেছে বলসুন্দর কুলের দামটাও বেশি পাচ্ছে চাষিরা

 

মহেশপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, বাউ কুল একটি লাভজনক ফসল অল্প সময়ে এটি চাষ করে বেশি লাভ পাওয়া যায় তিনি জানান, ২০১১ সালের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখি প্রকল্প ( এসসিডিপি) আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ডা: তাজু উদ্দিন দেড় বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন কুলের পাশাপাশি এই জমিতে বোরো ধান, কলাই চাষ করা যায় তিনি বলেন, মহেশপুরের মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রাম সম্ভাবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাউকুল চাষ এলাকা এই গ্রামের বাউকুল চাষীদের কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে কারিগরি, রোগবালাই, কৃষক প্রশিক্ষণ, কুল প্যাকেজিংসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বাউ কুল চাষীদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য হাসান নামের একজন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মান্দারবাড়িয়া øকে রাখা হয়েছে কৃষি অফিসার বলেন, এলাকার কুল চাষীদের লাভের কথা শুনে অনেকে বাউকুল বাগান দেখতে আসছেন এবং নিজেরা গ্রামে গিয়ে নিজ উদ্যোগে বাউকুল বাগান তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন

 

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুল করিম বলেন, কুল চাষীদেরকে উদ্বুদ্ধো করার জন্য কুল চাষীদের নিয়ে উঠান করা হয়েছে তাদেরকে নিয়ে একটি বাড়ি একটি খামারের আওতায় একটি সমিতি করা সল্প সুদে ঋিণ দেওয়ার ব্যাবস্থা সহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে

 

যাযাদি/এসএইচ