তহসিলদারকে দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চায় ভুক্তভোগী বৃদ্ধ

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২২, ১৩:১৬

হাতিয়া  প্রতিনিধি

নিজের দখলে থাকা জমিটি প্রতারণা করে প্রতিবেশী একজন তাঁর নামে বন্দোবস্ত নিয়ে নেন। সেই বন্দোবস্ত নথি বাতিল করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে (তহসিলদার)

 

তদন্ত প্রতিবেদনটি সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য তহসিলদারকে দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। টাকা পেয়েও তহসিলদার প্রতিপক্ষের পক্ষে রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া এখন ক্ষুদ্ধ মো. হাসান (৬০) নামে এক বৃদ্ধ। প্রতিদিনিই সেই টাকা ফেরত পেতে উপস্থিত হচ্ছেন তহসিলদারের অফিসে। কখনো এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কখনো নিজে এসে হই চিৎকার করে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

 

সম্প্রতি এই ঘটনা ঘটে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া বুড়িরচর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। বৃদ্ধ হাসান জানান, নথি বাতিলের আবেদনের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তহসিলদার (ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) মুজিবুল হক এলাকাই আসেন। এলাকার প্রায় শতাধিক গন্যমান্য লোক উপস্থিত থেকে  তহসিলদারকে জায়গাটি বৃদ্ধের দখলে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। সঠিক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিন ধাপে ৩০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তহসিলদার  প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আরো মোটা অংকের টাকা খেয়ে প্রতিবেদনটি বৃদ্ধার বিপক্ষে দিয়ে দেন। 

 

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টাকা ফেরত চাইতে বিভিন্ন সময় তহসিল অফিসে এসে হট্টগোল করছেন বৃদ্ধ হাসান। এসময় তহসিলদার মুজিবুল হক অফিসের শৃংখলার কথা বলে বৃদ্ধকে থামানোর চেষ্ঠা করেও হন ব্যর্থ। বৃদ্ধার চিৎকারে ভূমি অফিসের সামনের রাস্তার অনেক পথচারী এসে জমাট হন। 

 

বৃদ্ধার চিৎকারে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে, প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে প্রতিবেদনটি বৃদ্ধার বিপক্ষে দেওয়া হয়নি বলে জানান তহসিলদার। তিনি আরো জানান প্রয়োজনে উপজেলা ভূমি অফিসে শুনানীর দিন উপস্থিত থেকে প্রতিবেদনের পক্ষে পর্যালোচনায় অংশগ্রহন করবেন। 

 

বৃদ্ধ হাসানের বাড়ি হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের সুইজের বাজারের দক্ষিণ পাশে। সামান্য পুঁজি নিয়ে মাছের ব্যবসা করে সংসার চালান তিনি। নিজের বাড়িসহ একমাত্র জায়গাটি প্রতারণা করে প্রতিবেশী একজন তার নামে বন্দোবস্ত নিয়ে নেওয়ায় হাতাশার মধ্যে কাটছে তার দিনকাল। বিশ্বাস করে সেই প্রতিবেশীকে জায়গাটি বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য টাকা কাগজপত্র জমা দিয়ে ছিলেন বলে জানান বৃদ্ধ হাসান।

 

বৃদ্ধের সঙ্গে আসা কালিরচর গ্রামের মাছ ব্যবসাযী রাসেল জানান, সহজ সরল বৃদ্ধকে ঠকিয়েছে তহসিলদার। শুধু হাসানের সঙ্গে নয়। এলাকার অনেক লোকের সঙ্গে টাকা নেওয়ার পরও অনুরূপ প্রতারণা করে আসছেন তহসিলদার মুজিবুল হক। 

 

তিনি আরো জানান, কালিরচর গ্রামের হাসেম মাঝি সারোয়ার হাজী দুজনকে অনুরুপ ভাবে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন এই তহসিলদার। তার  অফিসে দুই জন নির্ধারিত দালালের মাধ্যমে সেবা নিতে আসা সাধারণ লোকজন থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেন তিনি।

 

এসব অভিযোগ সর্ম্পকে বুড়িরচর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মুজিবুল হক জানান, তদন্ত প্রতিবেদনটি হাসানের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিনি এখন টাকা নেওয়ার বিষয়টি বলে বেড়াচ্ছেন। টাকা না দিলে অফিসের ভিতরে লোকজন নিয়ে এসে এভাবে হট্রগোল করেন কিভাবে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,বিষয়টি আমি এখনো ওভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখিনি।’ অন্যান্য লোকের অভিযোগের বিষয় গুলোও মিথ্যা বলেও জানান তিনি।

 

হাতিয়া উপজেলা সহাকারী কমিশনার ভূমি বায়েজীদ বিন আখন্দ বলেন, ‘মুজিবুল হককে শাস্তি মূলক বদলী করা হয়েছে হাতিয়াতে সেনবাগ থাকাকালিন কিছু অনিয়ম কতৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় হাতিয়াতে বদলী করা হয়। বৃদ্ধ হাসানের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ার বিষটি আমি  মৌখিক ভাবে শুনেছি। লেখিত অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ’

 

যাযাদি/ এম