ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বে-সরকারি স্কুলের ছাত্রাবাসে নির্যাতনের ঘটনা মায়ের কাছে বলে দেয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে স্কুলের অধ্যক্ষ বেদম মারধোর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষার্থীর মা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আহত শিক্ষার্থীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও স্কুল ছাত্রের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জেলার কসবা উপজেলার বিশারাবাড়ি গ্রামের দুবাই প্রবাসীর একমাত্র ছেলে উইজডম স্কুল এন্ড কলেজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের বিয়াল্লিশ্বর শাখার ক্যাম্পাসে ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন। সে ওই স্কুলের আবাসিক ছাত্র।
ছাত্রাবাসের নবম শ্রেনীর তিন ছাত্র তার সাথে অশোভন আচরণ ও তাকে মারধোর করত। গত ১৬ মে সোমবার সকালে ওই শিক্ষার্থীর মা বিদ্যালয়ে গিয়ে ছেলের বেতন ও রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ আট হাজার ৩০০টাকা জমা দেন। ওই সময় তিনি দেখতে পান ছেলের চেহারা ও নাক-মুখ ফোলা। পরে তিনি ছেলেকে সাথে করে কসবায় বাড়িতে নিয়ে যান। রাতে ছেলে মায়ের কাছে হোস্টেলে নির্যাতন ও মারধোরের কথা বলেন।
ছেলের কাছ থেকে শুনে রাতেই শিক্ষার্থীর মা ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে মোবাইলে বিষয়টি অবহিত করেন।পরদিন বুধবার সকালে ওই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েম তাকে ও তাকে নির্যাতনের অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাদেরকে বেত্রাঘাত করেন।
বিকেলে ওই শিক্ষার্থীর মা বিদ্যালয়ে গেলে সে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে তিনি এ ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।এ ব্যাপারে ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, হোস্টেলে আমার ছেলেকে অন্য তিন শিক্ষার্থী বেশ কয়েকদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল। বিষয়টি বাড়িতে এসে ছেলে আমাকে জানালে আমি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের অধক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ককে জানাই। পর দিন অধ্যক্ষ আমার ছেলেকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধোর করে। এতে তার বামহাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল জখম হয়ে কালো হয়ে যায়। তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশকে অবগত করায় হোস্টেল সুপার আমার সাথে অশোভন ও খারাপ আচরণ করেছেন।
এ ব্যাপারে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক নাজমা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীর মা আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। আমি তাকে কেন বকাবকি করব? । তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী আমাদেরকে না জানিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার মাকে জানিয়েছে। তাই অধ্যক্ষ স্যার তাকে একটা বেত দিয়ে তার হাতে বারি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উইজডম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েম বলেন, অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে শাসন করেছি। আমাদের না জানিয়ে ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী তার অভিভাবককে জানিয়েছে। তাই তিন শিক্ষার্থীর সাথে তাকেও হালকা একটু শাসন করেছি। তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যালয়ে পুলিশ নিয়ে এসেছিল। আমরা পুলিশের সাথেও কথা বলেছি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থীর মা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
যাযাদি/এসএইচ