সিলেটে বন্যা :নগরীতে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি, নিম্নাঞ্চলে হাহাকার
প্রকাশ | ২৩ মে ২০২২, ১৯:৫২
সিলেটে বৃষ্টি থেমে গেছে। আকাশে ঝকঝকে রোদ। সুরমার পানি প্রায় দেড় ফুট নিচে নেমে গেছে। তাই নগরীর প্রায় সকল এলাকায় আটকে থাকা পানি অনেকটাই নেমে গেছে। তবে এসব এলাকার বানভাসিদের ঘরে পচা পানির দুর্গন্ধ। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ও ব্যক্তিগতভাবে ঘর ধোঁয়ামুছার কাজ চলছে। এদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। সেখানে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণও বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার বাড়ছে। এসব নিম্নাঞ্চলের অনেক মৎস্য চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। বানের জলে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার মৎস সম্পদ। বিশেষ করে, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকার মৎস্য খামার পানিতে ভেসে গেছে।
সিলেট নগরীতে পানি নামতে শুরুর পর থেকে নতুন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বন্যা আক্রান্ত এলাকার লোকজনকে। সিলেট নগরীর বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। বন্যার পানিতে ময়লা-আবর্জনা পচে তৈরি হয়েছে উঠকো গন্ধ।
রবিবার পর্যন্ত যাদের বাসা-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে তারাও ফিরতে পারছেন না নিজ ঘরে। ঘরের ভেতর ও বাহিরে চরম দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় বাসা-বাড়িতে ওঠা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকে শ্রমিক লাগিয়ে বাসা-বাড়ি পরিস্কার করলেও এখনো ফিরছেন না দুর্গন্ধের কারণে।
সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম বলেন, পানি পুরোপুরি না নামলে ময়লা-আবর্জনাও পরিস্কার করা সম্ভব হবে না।
নগরীর উপশহর, তেররতন, সাদিপুর, কুশিঘাট, সোবহানীঘাট, যতরপুর, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, তালতলা ও জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। সুরমা নদীর পানি কমায় লোকালয় থেকেও পানি নামছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গেল ২৪ ঘন্টায় এ দুই পয়েন্টে পানি কমেছে যথাক্রমে ১১ ও ১০ সেন্টিমিটার। এছাড়া কুশিয়ারার পানি রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় জকিগঞ্জের আমলসীদে বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, সিলেটের নিম্নাঞ্চলে এখনো বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করলেও কিছু এলাকায় নদী-খাল ও হাওরে প্রবাহিত হয়ে নতুন করে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে উপজেলার ভেলকুনা, গয়াসী, বাঘমারা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ববাজার, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ববাজারে পানি উঠার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। যাতায়াতের বিড়ম্বনায় পড়েছেন ওই এলাকার জনসাধারণ।
ফেঞ্চুগঞ্জের গেজ রিডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২.২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সীমা শারমিন বলেন, পানি বেড়েছে তবে এটা আর আশঙ্কাজনক নয়, বিস্তৃত বন্যা পরিস্থিতি হবে না।
সিলেটের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানিতে মৎস্য খামারিদের প্রায় ২২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে খামারের মাছ ভেসে যাওয়ার ক্ষতি যেমন আছে, তেমনি আছে অবকাঠামোগত ক্ষতিও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারিদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উপর মহলে অভিহিত করা হয়েছে। যাতে তাদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়।
সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্র বলছে, সিলেটে প্রায় ৫৩ হাজার পুকুর, খামার, হ্যাচারি ও দিঘীতে মাছ চাষ করা হয়। এবারের বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলার ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, খামার, হ্যাচারি তলিয়ে যায়। এতে ২ কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং ২ হাজার ৩০৫ টন মাছ ভেসে গেছে। এবার বন্যায় মৎস্যখাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলায়।
সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘বন্যায় ১৫ হাজার ১৬৩ জন মাছ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।’
যাযাদি/এস