ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এবার সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রচলিত অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হয়েছে। শ্রমিকের পারিশ্রমিক নতুন পদ্ধতিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিশোধের ব্যবস্থা করায় প্রকল্পের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো বিশেষ করে কাঁচা রাস্তা সংস্কার, খাল খননসহ জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ হওয়ায় অনেকটাই বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ চিত্র।

নাচোলে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি ও বাইসাইকেল বিতরণ 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপির সার্বিক নির্দেশনা ও সুদৃষ্টিতে উপজেলার ১০ ইউনিয়নেই অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি শতভাগ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যেখানে গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল, সেখানে ইজিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কগুলো চলাচলের উপযুক্ত করা হচ্ছে। সড়কের পাশের জঙ্গল পরিস্কার করে রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন মানে পরিবর্তন ঘটছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাকারিয়া আলম তালুকদার জানিয়েছেন, তারাকান্দা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ইজিপিপি প্রকল্পে ২য় পর্যায়ে ২০টি অধিক প্রকল্পে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৬৬৯ জন। দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা হারে জিটুপি (সরকার টু পারসন) পদ্ধতিতে নগদে কর্মরত শ্রমিককে পরিশোধ করা হয়। এতে শতভাগ স্বচ্ছতার বজায় থাকে। এখানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ টাকা লেনদেন বা কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ হচ্ছে অপরদিকে তেমনি মৌসুমে কর্মহীন অতিদরিদ্র মানুষ কাজের মাধ্যমে আর্থিম নিশ্চয়তা পাচ্ছেন। গ্রামীন উন্নয়নের পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখছে এ প্রকল্প।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কামারিয়া ইউনিয়নে একটি খাল খননের অভাবে এলাকাবাসীর অফুরান ভোগান্তি ছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এবার ইউনিয়নের চরকৃঞ্চপুর শাহজাহানের ফিসারীর পাড় হতে মোজাহারদী সুরুজ ব্যাপারীর ফিসারীর পাড় পর্যন্ত (১৫০০ মিটার) দীর্ঘ খাল খননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম এ খাল খননের মধ্যদিয়ে শত শত একর জমি ফসল আবাদের ব্যবস্থা হয়েছে। এলাকাবাসী কষ্ট লাঘব হয়েছে। শ্রমিকরাও সঠিকভাবে পারিশ্রমিক পাওয়ায় উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে।

উপকারভোগী শ্রমিক তারাকান্দা সদর ইউনিয়নের আনোয়ারা বেগম, ঢাকুয়া ইউনিয়নের নিরেল চাম্বুল, ও কামারিয়া ইউনিয়নের হাবিবুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ১ম পর্যায়ে (ইজিপিপি) ৪০দিনের মুজরী টাকা নগদ’র মাধ্যমে তারা সঠিকভাবে পেয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ চলমান।

তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কর্মসৃজন প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কমিটি রয়েছে। সরকারি ১ জন কর্মকর্তা ইউনিয়ন ভিত্তিক ট্যাগ অফিসার হিসেবে তদারকি করছেন। এতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

কামারিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম সরকার বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়নের সুযোগ নেই। বর্তামান সরকার অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ হবার সুবিধাও ভোগ করছেন। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নগদ’র মাধ্যমে হাতে হাতে টাকা পাচ্ছেন। তিনি জানান, তার ইউনিয়নে এবার তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক কাজ হয়েছে। তিনি সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

এ ব্যপারে গৃহয়াণ গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষে কাজ করছে সরকার। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল শ্রেণির মানুষকে উন্নয়ন ধারায় সম্পৃক্ত রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অতিদরিদ্র পরিবারের অক্ষম লোকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্প একটি যুগান্তকারী কর্মসূচি। এ কর্মসূচি চালু হওয়ায় এলাকার শত শত কর্মহীন দরিদ্র পরিবারের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারসহ ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। এসব প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

যাযাদি/এস