মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের পাঁচখোলা গ্রামটি এখন উপশহরে পরিণত হয়েছে। গ্রামটিতে নির্মিত হয়েছে ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রবীণ নিবাস, হাসপাতাল, নার্সিং ইন্সটিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এতিমখানা, স্কুল, কলেজ, আধুনিক অডিটরিয়াম, মসজিদ, মাদ্রাসা, টিএমএসএস এর কেন্দ্র, কমিউনিটি পুলিশিং কেন্দ্র, পল্লী বিদ্যুতের অফিসসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। মানুষের যাতায়াতের জন্য পাকা রাস্তা। এসব প্রতিষ্ঠা করেন মাদারীপুরের পাঁচখোলা গ্রামের কৃতি সন্তান সাবেক সিনিয়র সচিব, দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার সভাপতি, বিশিষ্ট সমাজসেবক, বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাননীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াজেদা-কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পাঁচখোলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আধুনিকমানের ওয়াজেদা কুদ্দুস প্রবীণ নিবাস। প্রবীণদের জন্য ভবনের প্রতিটি থাকার রুমকে সাজানো হয়েছে আধুনিক ও মানসম্মত রুপে। রুমগুলোতে রয়েছে এসি, সোফা, খাট, আলমারী, চেয়ার-টেবিল, আয়না ও বাথরুম সংযুক্ত। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হয় এ যেন একটি উন্নত মানের হোটেল। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও এতিমখানাকেও সুসজ্জিতভাবে সাজানো হয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ ও ছয় তলা দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ভবনগুলোতে লিফটসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। ইতোমধ্যে নার্সিং ইন্সটিটিউট এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ত্রিশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। উপর্যুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও প্রবীণ নিবাসে যারা থাকবেন তাদের বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বড় একটি লাইবে্িরর।
ক্যাম্পাসের ভিতরে হাটার জন্য সুন্দর ওয়াক ওয়ে রয়েছে। অনেক বছর পূর্বে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি হাই স্কুল গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে তার আধুনিকিকরণ করা হয়। স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে নির্মাণ করেন আধুনিক মানসম্মত ড. মো. মোজাম্মেল হক খান অডিটরিয়াম। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের এসএসসি পাশ করার পর দূরদূরান্তে যেত হতো কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য। গরীব, অসহায়, মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজের নাম করন করা হয় ড. মো. মোজাম্মেল হক খান কলেজ। কলেজের শিক্ষকদের জন্য একটি চারতলা ভীত বিশিষ্ট বাসভবন ও শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। গ্রামের মাটির রাস্তা তাঁর প্রচেষ্টায় এখন বড় পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে। নির্মাণ করেছেন মসজিদ, টিএমএসএস এর কার্যক্রমের জন্য বরাদ্ধ করেছেন অফিস ভবন, কমিউনিটি পুলিশিং কেন্দ্র, পল্লী বিদ্যুতের অফিসসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। এ সব প্রতিষ্ঠান করার ফলে বদলে গেছে পুরো পাঁচখোলা গ্রামের চিত্র। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকের। জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষের। এ ছাড়াও এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবককে তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকুরীর সু-ব্যবস্থা করেছেন।
পাঁচখোলা গ্রামের ওয়াহিদুজ্জামান খান বাতেন বলেন, ওয়াজেদা কুদ্দুস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মাননীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এর উদ্যোগে আজ পাঁচখোলা গ্রামসহ মাদারীপুরের চিত্র বদলে গেছে। জেলার প্রথম প্রবীণ নিবাস তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি বহু সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাদারীপুর জেলায় একত্রে এক জায়গায় এত প্রতিষ্ঠান আর কোথাও নেই। আমরা পাঁচখোলাবাসী ড. খান এর জন্য গর্বিত। তিনি এ গ্রামে জন্ম না নিলে আজ এ অঞ্চলের বহুমাত্রিক উন্নয়ন হতো না।
ড. মো. মোজাম্মেল হক খান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল হালিম বলেন, মাদারীপুরের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি শিক্ষিত প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চান ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। তাঁর একটি বিখ্যাত ¯েøাগান “ সন্তান আপনার তাকে মানুষ করার দায়িত্ব আমাদের” এই কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে গড়ে তুলেছেন। প্রাইমারী ও হাই স্কুল অনেক বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হলেও ছিল না ভালো একাডেমিক ভবন। ড. খানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্কুল দুটিতে আধুনিক দৃষ্টি নন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্কুলের পাশেই ড. মো. মোজাম্মেল হক খান নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
কলেজের পাশেই শিক্ষক ও ছাত্রদের আবাসনের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি আধুনিক ভবন। আমরা বড়ই ভাগ্যবান যে, ড. খান এর মত একজন মানুষ পেয়েছি, সমাজ সংস্কারক পেয়েছি, বুদ্ধিজীবী পেয়েছি, শিক্ষানুরাগী পেয়েছি। মানুষের হাতে ক্ষমতা এলে অর্থের দিকে ঝুকে পড়ে, সম্পদের দিকে ঝুকে পড়ে, প্রাচুর্যের দিকে ঝুকে পড়ে। কিন্তু তিনি ঝুকে পড়েছেন শিক্ষা ক্ষেত্রে। গড়ে তুলেছেন শিক্ষাপল্লী। এর পাশাপাশি তিনি ব্যাপকভাবে সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
ওয়াজেদা-কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, পৃথিবীতে যারা বিখ্যাত হয়েছে সকলেই মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছে। আমি শুধুমাত্র তাঁদেরই অনুকরন ও অনুসরন করেছি। মানব কল্যাণের সার্থকতা হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য ব্রতী হওয়া এবং সাধ্যমত অবদান রাখা।
আমি এ গ্রামেরই সন্তান। এ গ্রামের সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ হিসেবে নিত্যদিন মানুষ যে দুঃখ, কষ্ট, বিভিন্ন বাধা-বিঘেœর সম্মুখীন হয়, সেখানে পাশে দাঁড়াতে পারলে মানুষের কিছুটা কল্যাণ করা হবে। অনেক গরীব ও এতিম ছেলে-মেয়ে রয়েছে যারা সঠিকভাবে পরিচর্যা পায় না। সেই সকল ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য আমি একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছি। এতিমখানায় শিক্ষার্থীরা আরবি শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি ও কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাবে। এতিমখানাতে থেকেই শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। গ্রামে অনেক মানুষ রয়েছে যারা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সঠিকভাবে আদর যতœ করে না। আমি সে সকল বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য একটি প্রবীণ নিবাস প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রবীণদের জন্য এখানে সুন্দর পরিবেশে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতিমখানা, প্রবীণ নিবাসের লোকজন এবং এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ৩০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। হাই স্কুল পাশ করে যাতে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ পায় তার জন্য এ গ্রামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠাতা করা হয়েছে। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্যই আমি এ সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।
প্রবীনদের জন্য এখানে এক্স-রে মেশিন, ব্যায়াম করার সামগ্রি, প্যাথলজি টেস্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যখন ত্রিশ শয্যা হাসপাতাল চালু হবে তখন চিকিৎসা সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রতি সপ্তাহে না পারলেও প্রতি মাসে একবার ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনে মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবো ইনলাআল্লাহ। সামগ্রিক কল্যাণমূলক কাজের একটি দৃশ্য এখানে ফুটে উঠেছে। একজন বৃদ্ধকে যখন তার ছেলে-মেয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখানে আসবে তখন ওই বাবা-মা বলবে আমি এখানেই থাকবো। আমি বাড়ি যাব না। এটাই আমার বাড়ি। সেই দিন আমি খুশি হবো। এরকম একটা পরিবেশ আমি তৈরি করতে চাই।
যাযাদি/এসএইচ