আলোচিত তিনবিঘা করিডোর মুক্ত দিবস আজ
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২২, ১২:০২

ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের পর ভারতের অভ্যন্তরে ২২.৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দহগ্রাম- আঙ্গারপোতা পূর্ব পাকিস্তানের অংশে পড়ে।সেই থেকে ভারতের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলাধীন দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকার মানুষ। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও মুজিব- ইন্দিরা চুক্তি মতে,পঞ্চগড়ের বেরুবাড়ী ছিটমহলের বিনিময় তিনবিঘার উপর দিয়ে চলাচলের জন্য প্যাসেজ ডোর হিসেবে করিডোর উদ্বোধন করেন।
দৈর্ঘ্য ১৭৮ ও প্রস্থ ৮৫ মিটার তিনবিঘার জমিটুকু ৯৯ বছরের চুক্তিতে ভারত সরকার লিজ দেন বাংলাদেশকে।১৯৯২ সালের ২৬ জুন রেশনিং পদ্ধতিতে ‘তিনবিঘা করিডোর’ এক ঘণ্টা পর পর দিনে ৬ ঘণ্টা খোলা রাখা শুরু করে। তখন কিছুটা হলেও মুক্তির স্বাদ পায় দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা দুটি ছিটমহলের ১৮ হাজার মানুষ।২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আরো ৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করিডোর গেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ৪ সেপ্টেম্বর তিনদিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এলে গেটটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম সফরের মধ্য দিয়ে তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।
সেই থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে অবহেলিত দহগ্রাম - আঙ্গাপোতায়। তৈরী হয় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং নির্মিত হয় নতুন নতুন ভবন। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দহগ্রাম আওয়ামীলীগ কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং তিনি বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ,দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ১০ শয্যার হাসপাতাল, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনার উদ্বোধন করেন।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের জরিপ মতে, বর্তমানে ১৮'৬৮ হেক্টর জমির দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা এলাকায় সারে ৩ হাজার পরিবারে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। ফাঁড়ি থানা ১টি, বিওপি ক্যাম্প ২টি, ইউনিয়ন পরিষদ ১টি, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি, বে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬টি, বে-সরকারী রেজিঃ প্রাঃ বিদ্যালয় ০৪টি, দাখিল মাদরাসা ১টি, ফোরকানিয়া মাদরাসা ১টি, এবতেদায়ী মাদরাসা ১টি, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ৪টি, ১০ শয্যার হাসপাতাল ১টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ২টি, মসজিদ ৪০টি, মন্দির ১টি, তিস্তা ও সাঁকোয়া নামে ২টি নদী ও একটি জলমহলসহ অনেক কিছুর সমাবেশ ঘটেছে দহগ্রাম আঙ্গোরপোতায়। বর্তমানে দহগ্রাম আঙ্গোরপোতায় শিক্ষিতের হার ৬০%।
তৎকালীন দহগ্রাম সংগ্রাম কমিটি'র সভাপতি ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুল হক আজ বেঁচে নেই। তবে সংগ্রাম কমিটি'র সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক রেজানুর রহমান রেজা প্রধান বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন দহগ্রামবাসী। মানচিত্র রক্ষার্থে তিস্তা নদীর বাম তীর বাঁধ ও অসহায় দুঃস্থ ১৩০ পরিবারের জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রধানমন্ত্রীর অবদান।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আ'লীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র হাতে বিদ্যুৎ সংযোগের পর ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে। মোবাইল টাওয়ার টেলিটক স্থাপন করা ছাড়াও সম্প্রতি টিপি ওয়াইফাই সংযোগ দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ থেকে ভূমি রেজিঃ কোন সমস্যা নেই । আয়তনে ছোট্ট দহগ্রাম- আঙ্গারপোতা উন্নয়নের দিক থেকে বর্তমানে দেশের রোল মডেল বললেই চলে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কর্মজীবী এবং গবাদিপশুর উপর নির্ভরশীল রয়েছে অসংখ্য খামারি ব্যবসায়ী। এখানকার মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে
প্রতিবছর ২৬ জুন তিনবিঘা করিডোর উন্মুক্ত দিবস পালন করেন।
জানা মতে,প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা মিলে ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ ইউনিয়নের মর্যদা লাভ করে। সবকিছু মিলিয়ে সময়ের প্রয়োজনে দহগ্রামবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে প্রতি হাটে ৩০টি গরুর স্থলে ১০০টি গরুর সিরিয়াল নিশ্চিতকরন ও পদ্ধতি অবলম্ব করে গোমাংস বাজারজাতকরণের বিষয়টি গুরুত্বসহ কারে বিবেচনা করে আরোও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান সেখানকার মানুষ।
তবে এখনও পরাধীন দহগ্রামের মানুষজন মনে চাইলে নিজেদের ইচ্ছে শক্তির স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেনা। যার বাস্তব উদাহরণ চলতিবৎসরের ৬মে রোজ শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগমন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। তার আগমনে বাংলাদেশের দহগ্রামে ইউনিয়নে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বাংলাদেশিদের চলাচলের একমাত্র সড়কটি পৌনে দুই ঘন্টা বন্ধ করে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গেটের দুই দিকে হাজারোও নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ ও দর্শনার্থী আটকা পড়ে। প্রখর রোদে ভোগান্তিতে পরে বাংলাদেশি এসব লোকজন।
সীমান্ত সূত্র জানায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিএসএফের বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তিনবিঘা হ্যালিপ্যাড মাঠে নামেন। কোচবিহার জেলার তিনবিঘা করিডর সড়কপথে পরিদর্শনে আসলে তাঁকে স্বাগত জানান বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ সিং। এসময় উপস্থিত ছিলেন-ভারতের উত্তরবঙ্গের আইজি অজয় কুমার সিং, কোচবিহারের জেলা শাসক পবন কাদিয়ান, পুলিশ সুপার সুমিত কুমার প্রমুখ।
এ সময় ভারতীয় ৬ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা করিডরের চারদিকে সামিয়ানা/পর্দা দিয়ে ঘিরে রাখে। এ সময় করিডরে বিএসএফের বৈঠকখানা/কনফারেন্স কক্ষে প্রায় ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদার বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে বিএসএফের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও বিজেপির রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনবিঘা করিডর এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন।তবে তার এই সফর সকলের কাছে এখনও রহস্যময়।
যাযাদি/এসএইচ