ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রুমা আক্তার-(৩০) নামে এক অসহায় নারী দুই পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন।
গত বুধবার রাত সোয়া ১১টায় তিনি যমজ পুত্র সন্তান প্রসব করেন। রুমা আক্তারের বাড়ি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায়। ছোট বেলাতেই সৎ মায়ের অত্যাচারে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান রুমা আক্তার। বড় হন বিভিন্ন স্থানে। কয়েক বছর আগে চলে আসেন আখাউড়ার খড়মপুরে। সেখানে থাকার সময়ই হবিগঞ্জের যুবক ইব্রাহিম মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। পেশায় দিন মজুর ইব্রাহিমকে নিয়ে রুমা বসবাস করতেন আখাউড়া পৌর শহরে ভাড়া বাসায়।
দাম্পত্য জীবনে তাদের এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়। স্বামীকে নিয়ে ভালোই ছিলেন রুমা আক্তার। রুমা দ্বিতীয়বার গর্ভধারনের পর গত ৮ আগে ইব্রাহিম মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে কন্যা নিয়ে চলে যান দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে। রুমা জানেন না বর্তমানে তার স্বামী ও কন্যা কোথায় আছে।
স্বামী চলে যাওয়ার পর রুমা আক্তার ভাড়া বাসা ছেড়ে আশ্রয় নেন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। অন্যের কাছে হাত পেতে চলতো পেট। সেখানে সুমী আক্তার নামে এক নারীকে মা ডাকতেন। গত বুধবার রাতে সুমী আক্তার রুমাকে নিয়ে যান আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুই ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি।
জিলহজ মাসকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে রুমা সন্তানদের নাম রাখেন হাসান ও হোসেন। তবে সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। নিজে এখানে সেখানে বেড়ে উঠলেও ছেলে সন্তানদের কিভাবে লালন পালন করবেন এই ভাবনা তার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রুমাকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে হয়তো হাসপাতালে তাকে বেশিদিন রাখা সম্ভব হবে না। দুই সন্তানসহ রুমা এখন ভালো আছে।
হাসপাতালের ধাত্রী (মিডওয়াইফ) তানিয়া আক্তার ও রোকসানা আক্তার বলেন, প্রসব করাতে গিয়ে দেখি টুইন বেবি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোর কারনে বিষয়টি প্রসূতি নারীরও জানা ছিলোনা। আল্লাহর রহমতে ভালোভাবেই সন্তান প্রসব করে রুমা। রাত ১১টা ১০ মিনিট ও ১১টা ২০ মিনিটের সময় ওই নারী দুই সন্তান প্রসব করেন।
রুমা আক্তার বলেন, বড় ‘মেয়েটাকে নিয়ে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্টেশনে আশ্রয় নেই। ছোট বেলা থেকেই আমি বাবা-মা হারা। সৎ মায়ের অত্যাচারে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে এক বোন মারা গেছে। বাকিদের সাথে যোগাযোগ নেই।
তিনি বলেন, নবজাতকদের নিয়ে কোথায় যাবেন সেটা জানেন না। সবাই মিলে যেন অন্তত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন। সেই অনুরোধ করেন রুমা আক্তার।
তিনি জানান হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে সন্তানদের নাম রাখেন হাসান ও হোসেন।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিমেল খান বলেন, হাসপাতাল থেকে ওই নারী ও নবজাতকদের সব ধরণের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সবাই আন্তরিকভাবে অসহায় ওই নারী ও তার সন্তানদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
যাযাদি/এস