বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ১৬ জুলাই ২০২২, ১৬:৫২

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বিরুদ্ধে আপত্তি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলমকে সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ভাবে জেলা কমিটি কর্তৃক তাঁর পদ থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য পৌর মেয়র অধ্যাপক আককাস আলী স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাড়ু গোপাল কুন্ডু।

পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলজার হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৭ডিসেম্বর ২০১২ সনে বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে অদ্যবধি সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বর্তমান সাধারন সম্পাদক খায়রুল আলম রাজু। অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পারভেজ কবির পদ পদবী নিয়ে দলের তথা প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনের কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন না, এবং নির্বাহী কমিটির কোন মিটিংএ উপস্থিত হন না। আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিককে সাথে নিয়ে সকল জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করে আসতেছি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের নিমিত্তে জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে সাধারন সম্পাদক খায়রুল আলম রাজু ১১৪ ভোট ও নিকটতম পারভেজ কবির ৩৫ ভোট পান। সে অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত মনোনয়ন লাভ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক খায়রুল আলম রাজু। তৎপরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে সে সুযোগে কে বা কাহারা পারভেজ কবিরকে মনোনয়ন প্রদান করেন। কি করে খায়রুল আলম রাজু মনোনয়ন পত্র পাওয়ার পরও পারভেজ কবির মনোনয়ন পায় ইহা আমাদের বোধগম্য নহে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাহিরে থাকায় তাঁকে অবহিত করার সুযোগ না পেয়ে তৃণমূলের চাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলে যথাসময়ে নোটিশের জবাব প্রদান করেন খায়রুল আলম রাজু। তার জবাবে সন্তোষ্ট হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি খায়রুল আলম রাজুকে সাধারন ক্ষমা প্রদান করে উপজেলা কমিটির স্বপদে বহাল রাখেন। তখন থেকে ঈর্ষা পরায়ণ পৃর্বক সভাপতি ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পারভেজ কবির দলীয় কর্মকাণ্ডে দলকে কোন প্রকার সহযোগীতা করেন না। জাতীয় ও পৌরসভা নির্বাচনে পারভেজ কবীর নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। এর অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ‘৭১’ এর কুখ্যাত রাজাকার মরহুম ফজলার রহমান তার আপন ফুপা। তার বংশধরদের ও অনুসারীদের নিয়ে কাউন্সিল করার হীন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। আরও উল্লেখ্য যে গত সংসদ নির্বাচনে সংগঠনের সাথে না থেকে, না কাজ করে ধানের শিষের পক্ষে তার লোকজনসহ কাজ করে। জাতীয় দিবস পালন থেকে শুরু করে দলের সব কার্যক্রমে তিনি নিস্কৃয়। বিরামপুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পথসভায় ও দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সফরে রেলস্টেশনে যে পথসভা হয়েছিল, সেখানে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। সুতরাং তার এহেন অসাংগঠনিক কার্যক্রমের কারনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগী নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ। তাতে যেকোন মুহুর্তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সভাপতি মিজানুর রহমান গত ২০০১ জাতীয় নির্বাচনে কাপ পিরিচ প্রতিকে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্ধিত কমিটির সভা না করে অর্থের বিনিময়ে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করে। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, শুধু তাই নয় প্রবীণ ও বর্ষীয়ান নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মাস্টারের জানাযাতেও যাননি। এমন হীনমন্য ব্যাক্তিকে দিয়ে দলের সম্পসারণ সুরক্ষা তো দূরের কথা, দল তার হাতে নিরাপদও নয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এমপির নিকট বারবার আবেদন করেও বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল করার অনুমতি পাওয়া যায় নি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে খায়রুল আলম রাজুকে অব্যহতির পত্রটি যথাসময়ে প্রেরণ না করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী ১৪ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রকাশ করায় প্রতিয়মান হয় যে, জেলা আওয়ামীলীগ বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে নিজেদের প্রভাব খাটানোর পায়তারা করছে এবং নিজেদের পছন্দের লোক বাসানোর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক খায়রুল আলম রাজুকে জেলা আওয়ামীলীগ অব্যাহতি পত্রপ্রদান করার ক্ষমতা রাখেন না। যাহা একমাত্র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির রয়েছে। সুতরাং ২৮ ফেব্রুয়ারি ২২ তারিখের জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাক্ষরিত খায়রুল আলম রাজুকে অব্যাহতি পত্র প্রদান সাংগঠনিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী হওয়ায় বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২২ তারিখের পত্র প্রতাখ্যান করা হল এবং বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগকে রক্ষার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেতী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

সংবাদ সন্মেলনে উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী কমিটির ৫৬ জন সদস্যর মধ্যে ৯ জন সদস্যসহ উপজেলা পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে