নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি: গরিব আছে সংকটে, মধ্যবিত্তরা দিশেহারা

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:৫৩

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

ভোগ্যপণ্যের বাজারে নেই স্বস্তি। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। চড়া পণ্যমূল্যে আঁতকে উঠছেন মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।  দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম। ভোজ্যতেলের বাজারে কারসাজি তো রয়েছেই।

চালের বাজারে অস্থিরতা। মাছ-গোশতের বাজারে আগুন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শাকসবজির দামও। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির চাপও সবার আগে এসেছে সাধারণ মানুষের ওপরে। পোশাক-আশাক, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যয় সব দিকেই বাড়তি মূল্য। আর এ সব কিছুর দাম বৃদ্ধির চাপে সবার আগে চিড়ে চ্যাপ্টা স্বল্প আয়ের মানুষ।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। স্কুল, বাজার, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, নৌযান অর্থাৎ জ্বালানি তেলনির্ভর সব যানবাহনে বেড়েছে ভাড়া। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে অন্যান্য নিত্যপণ্যে।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের মধ্যে অধিকাংশ সবজির দামই আগের তুলনায় বেশি। উপজেলার উৎরাইল হাটে কাঁচা মরিচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০, বেগুন ৬০-৬৫, ঢ্যাঁড়স ৪৫-৫০, আলু ৩০-৩৫ টাকা। এ ছাড়া লালশাক, ডাঁটাশাকসহ বিভিন্ন শাকের আঁটি ১০-২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় আঁটি ছোট হয়েছে। এদিকে লাউ, কুমড়া, কচু, ঝিঙেসহ অন্যান্য সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকা, পাঙাশ ১৭০-১৮০ টাকা কেজি। চাষের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া নদী ও খাল-বিলের মাছের দাম আকাশছোঁয়া বলে ক্রেতারা জানান।

বুলবুল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘যেদিন মাছ কিনতে পারতাম না, সেদিন ডিম কিনে নিতাম। ডিম, আলু আর ডাল দিয়ে তিন বেলা খাওয়া যেত। ঘরের বাচ্চারাও খুশি থাকত। এখন কী করব? ডিমের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ডিমও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।’

দিনমজুর জলিল মিয়া বলেন, আগে প্রতিদিনই কাজ পেতাম। কোনো দিন কাজ না পেলে ভ্যান চালাতাম কিন্তু বাংলাবাজর ফেরী ঘাট বন্ধ হওয়া বেশি লোক হয় না। এতে সারা দিন ভ্যান চালিয়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা পাই আগে পেতাম ৫শ থেকে ৬শ টাকা। আমাদের চলতে খুবই কষ্ট হয়। গরিবের কষ্ট কেউ দেখে না। খাদ্যপণ্য কিনতেই আয়ের টাকা শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ করতে অবশিষ্ট কোন টাকা থাকছে না। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।

শাহিন মিয়া এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তাব্যক্তি থাকেন শিবচর উপজেলা এলাকায়। ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তান ও বৃদ্ধ মাসহ তাদের পাঁচজনের সংসার চলে এই আয়ে। কিন্তু সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর হচ্ছে না বেতনের টাকায়। তাই বাধ্য হয়ে কাজ শেষ করে রাতে টিউশনি করতে হচ্ছে তাকে।

স্বেচ্ছাসেবী  “দেশ (DESH)” সংগঠনের সভাপতি ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ‘এমনিতেই মানুষ ব্যয়ের চাপে আছে, তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে সামনে এসেছে। আয় না বাড়লেও ব্যয় বৃদ্ধিতে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’

এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে জানিয়ে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিনির্ধারিত মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই আমরা বাজার মনিটর করছি। তা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপজেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিং নিয়ে তৎপর রয়েছে।’

যাযাদি/ এসএইচ