শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে প্রাইভেটকারে মিললো শিক্ষক দম্পতির লাশ

হত্যা না আত্মহত্যা স্পষ্ট নয়-পুলিশ, স্বজনদের দাবি ’পরিকল্পিত’ হত্যা
গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৫:৫০
আপডেট  : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৬:৩৩

গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি ’পরিকল্পিত’ হত্যা বলছে স্বজনরা। কারণ তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণলংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। তবে পুলিশ এ ব্যাপারে পরিস্কার কোন তথ্য দেয়নি। কিংবা ঘটনাটি কি হত্যা না আত্মহত্যা তা-ও জানাতে পারেনি পুলিশ

বৃহস্পতিবার (১৮আগস্ট) ভোর রাতে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলির লাশ একই প্রাইভেট কারে ছিল বলে জানান তার স্বজনরা।

নিহত একেএম জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ বলেন, ইতিপূর্বে তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসই হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলিও টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁরা স্বপরিবারে থাকতেন গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তারা দুজনেই স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও সম্পকৃত মামাতো ভাই মো. কামরুজ্জামানকে (গনিতের শিক্ষক) গাড়িতে তুলে নিয়ে জিয়াউর যান স্ত্রী জলির স্কুলে। সেখান থেকে স্ত্রী জলিকে গাড়িতে তুলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন এ দম্পতি। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন জিয়াউর।

জিয়ার ছেলে মিরাজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু বাবার ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার মায়ের ফোনে কল করেন। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসছেন বলে জানান। কিন্তু মা কথা বলার সময় ক্লান্তির স্বর ভেসে আসছিল। এরপর থেকে ফোনে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। রাতভর তারা বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন।

টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান রানা বলেন, প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। জিয়াউর স্যার গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় এবং কামরুজ্জামান টঙ্গীর শিলমুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কামরুজ্জামান একই স্কুলের গণিতের সহকারি শিক্ষক। জিয়াউর স্যারও গণিতের শিক্ষক ছিলেন। কামরুজ্জামান হেডস্যারকে মামাতো ভাই বলে সম্বোধন করতেন। তবে স্বামী-স্ত্রী কিংবা স্কুলের সকল শিক্ষকের সঙ্গেই জিয়া স্যারের ভাল সম্পর্ক ছিল।

কারো সঙ্গে কখনও বিরোধ ও খারাপ সম্পর্কের কথা শুনিনি। সহকারি শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, স্কুলের পাশে প্রাইভেট পড়ানো শেষ করে বুধবার বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে স্কুলে টয়লেট ব্যবহার করতে যাই।

টয়লেট সেরে স্কুলের গেইটের কাছে গেলে হেডহাস্যার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্কুল থেকে বের হন। পরে তিনি পথে নামিয়ে দেবেন বলে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। আমাকে নিয়ে তার ম্যাডামকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন হেড স্যার। হেডস্যার নিজেই গাড়ি চালান।

পথে টঙ্গী বিসিকের সাহারা মার্কেট এলাকায় গিয়ে আমাকে সন্ধ্যা পৌণে ৭টার দিকে নামিয়ে দিয়ে তারা চলে গেছেন। এরপর আমার সঙ্গে তাদের আর কথা বা দেখা হয়নি।

কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার পলাশতলি গ্রামে। তিনি শিলমুন এলাকায় ভাড়া বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করেন। আর হেডস্যার গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় নিজ বাড়িতেই স্বপরিবারে বসবাস করেন। তার গ্রামের ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায়।

নিহত শিক্ষক দম্পত্তির ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সাংবাদিকদের জানান, সবশেষ বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। তারপর কোন যোগাযোগ করতে না পেরে রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ভোর রাতের দিকে গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক নামক জায়গায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের উপর তাদের প্রাইভেটকার দেখতে পেয়ে কাছে যান। এসময় চালকের আসনে বাবা ও পাশেই মাকে নিস্তেজ অবস্থায় পেয়ে তাদের প্রথমে বোর্ডবাজার এলাকার তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অপর একটি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এসময় ঘটনাটি গাছা থানা পুলিশকেও জানানো হয়। পরে পুলিশ দুটি এ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের লাশ গাছা থানায় নিয়ে যায়।

নিহতের বড় ভাই মো. রিপন সাংবাদিকদের বলেন, এ হত্যাকান্ডটি পুরোই ’পরিকল্পিত’। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণলংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত না-ই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেতো। তার কিছুই তারা নেয়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। কি কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারি-কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, তাদের লাশে সুরুত হাল প্রতিবেদন করা হয়েছে।

তবে তাদের লাশে মৃত্যুর কোন আলামত বাহ্যত পাওয়া যায়নি। পাশে একটি খালি বাটি পাওয়া গেছে। তবে তাকে কি ছিল তা পরীক্ষা- নিরীক্ষা চলছে। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী জানান, লাশ উদ্ধার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়মনতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া কিছু বলা ঠিক হবেনা।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে