বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোর রাতে ট্রলার ভরে দেদারছে বালু বিক্রি কুশিয়ারা নদীতে আবারও অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:২৬

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার জাহিদপুর গ্রামের নির্জন এলাকার চড়াঞ্চলকে নিরাপদ ভেবে আস্তানা তৈরি করে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় ও বাহিরের বেশ কিছু প্রভাবশালীরা। ওই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করায় ও নির্জন এলাকা থাকায় কয়েক মাস ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ট্রালারে বালু উত্তোলন করে কোটিপতি হচ্ছে এসব বালু খেকোরা। ইতিমধ্যে প্রশাসন বেশ কয়েকবার সরেজমিনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৩ বারে প্রায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা করলেও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।

ওই এলাকা থেকে শেরপুর এলাকার লিটন মিয়া নামের এক যুবককে রাজনগর উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার জরিমানা করলেও কোন এক অদৃশ্য ছাঁয়ায় সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে ওই এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ১০ জনের বিরোদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নিরাপদে বালু উত্তোলন করতে জাহিদপুর গ্রামের নানু মিয়া’র মেয়েকে বিয়ে করে ওই লিটন মিয়া। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালু সিন্ডিকেটের সাথে যারা জড়িত তারা ওই এলাকা থেকে বেশ কিছু মানুষ তাদের পক্ষে কাজ করতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা রোজ-এ ভাড়ায় খাটিয়ে কাজ করায়। নদী পাড়ের ওজান ও ভাটি এলাকায় বালু বিক্রি করতে তারা কিছু দালাল তৈরি করে রাখে। এদের মাধ্যমে দর কষাকষি করি এক-একটি ট্রলার ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

সরেজমিনে কুশিয়ারা পাড়ের জাহিদপুর গ্রামে গেলে ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা উমেষ নমসূদ্রের পুত্র জানান, তাদের ঘর একেবারে নদী পাড়ে। তাদের বাড়ির পশ্চিম প্রান্তের চড় এলাকায় বালু খোকোরা বহুদিন যাবৎ আস্তানা পেতে ভোর রাতে বালু তুলে দেদারছে বিক্রি করছে। তিনি বলেন, ওরা প্রভাবশালী থাকায় গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মুখ খুলে কথা বলেন না।

তিনি আরো জানান, এলাকায় প্রতিনিয়ত বালু তোলায় গ্রামে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের আরেক ব্যক্তি জানান, বর্ষা মৌসুমে নদী থেকে বালু তুলে ৪/৫টি নৌকা বোঝাই করে নদীর ওপাড়ের বালাগঞ্জ উপজেলায় নিয়ে বালুর স্তুপ রাখা হয়। এখান থেকে এখন ইচ্ছে মাফিক চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

জাহিদপুর গ্রামের মাধব চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এলাকায় অবৈধ পথে বালু সিন্ডিকেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

তারা জাহিদপুরের চড় এলাকার নির্জন স্থান থেকে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে আসছে। তবে গেল ৩ দিন ধরে জাহিদপুর থেকে সরে গিয়ে পাশের ভাটি এলাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে বালু উত্তোলন করছে বাহিরের প্রভাবশালীসহ আব্দুল্লাহপুর ও জাহিদপুর গ্রামের অসংখ্য মানুষ। এদিকে কুশিয়ারা নদী থেকে চুরি করে বালু উত্তোলন করায় সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বেকামুড়া এলাকার মনাই মিয়া নামের এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক ও রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র কাছে পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর এলাকার লিটন মিয়া, জাহিদপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া, মোঃ সালাম মিয়া, নানু মিয়া,কবির মিয়া, নোমান মিয়া,সঞ্জয় দাশ, আমীর আলী, এলাইছ মিয়া ও ডাক্তার রহমান’র পুত্র নানু মিয়া ড্রেজার মিশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

উল্যেখিতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ জানান তিনি। এদিকে চুরি করে কুশিয়ারা নদীর জাহিদপুর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সহকারি কমিশনার (ভূমি), রাজনগরকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কার্যলয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সৈয়দ সাফফাত আলী স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।

রাজনগর সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানজিদা আক্তার রোববার বলেন, আমি গেল মাসের ২৮ তারিখে অফিসে যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।

এদিকে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা পাল এক প্রশ্নের জবাবে রোববার বলেন, ওই অভিযোগের বিষয়টি মনে করতে পারছিনা। আসছিল হয়তো। তিনি বলেন, রাজনগর উপজেলা সদর থেকে নদীর তীরবর্তী জাহিদপুর এলাকা বহু দুরে। এলাকাবাসী সাহায্য করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

তিনি বলেন, এর আগে আমরা কুশিয়ারা নদীর জাহিদপুরে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এদের বিরোদ্ধে জরিমানা করেছি।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে