কলিম মিয়ার (৫৫) জন্ম অন্যের ভিটায়। ভূমিহীন বাবা ইব্রাহিম পাগলার মৃত্যুর পর সেই ঠাঁইও হারিয়ে যায়। বৃদ্ধ মা মোছাঃ কলিমন পাগলিকে নিয়ে রাস্তার ধারে খুপড়ি করে বসবাস শুরু করেন। খুঁজতে থাকেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাবা-মা দু’জনেই ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। এরই মধ্যে বিয়ে করেন কলিম পাগলা।
স্ত্রী মোছাঃ শরিতন বেগমের কোলজুড়ে আসে দুই সন্তান। সন্তান জন্মের খুশি মনে থাকলেও তা নিমিষেই মলিন হয়ে যায়। সড়কের ধারে ঠাঁই নেয়া শেষ সম্বল টুকুও হারিয়ে ফেলেন। এর মধ্যে মা কলিম পাগলিও মারা যান। একা হয়ে পড়েন মো. কলিম উদ্দিন পাগলা। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ছুটে যান দহবন্দ ইউনিয়নের বামনজল গ্রামে দিনমজুর শ্বশুড় মৃত আকবর আলীর বাড়ি। এখান থেকে ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়ে মোছাঃ কল্পনা আক্তারের সংসার বেশিদিন টেকাতে পারেননি। এখন সে গামেন্টস কর্মী। ছেলে অন্যের টি স্টলে কাজ করেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কলিম উদ্দিন পাগলা এখন অনেক কান্ত। দীর্ঘ সময় কেটে গেছে তাঁর পেডেল চালিত ভাড়ায় রিকশায়। অনেক স্বপ্ন ছিল নিজের একটা রিকশা হবে কিন্তু সুখের আশায় শরীর পুড়েছে নুন আর ভাতে। তবে সেই স্বপ্ন এখন পূরণ হয়েছে কলিমের।
জীবনের শেষ সময়ে স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় পার্টির অতিরিক্তি মহাসচিব (রংপুর) ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী তাঁকে একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা ভ্যান দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে নতুন রিকশা হাতে পেয়ে কলিমের চোখের কোণে জল টুপ করে পড়ে। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁর নিজের রিকশা হয়েছে। গামছায় মুখ মুছে কলিম মিয়া বলেন, মোর কষ্টের দিন শ্যাস। টিপ দিলেই মোর ইসক্য দৌড় মাইরবে। ঠ্যাং দিয়া চলা আর নাইগব্যার নয়। মুই এখন আরামে বসি থাকিম ইসক্যাত। খুব ভালো নাইকছে মোক। আল্লাহ এমপির ভালো করুক। শুধু কলিমই নয় তাঁর মতো একই গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে মোঃ হাফিজার মিয়া (৪৭) কেও একটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা দেন স্থানীয় সাংসদ।
নতুন রিক্সা পেয়ে তিনিও বলেন, কষ্টের দিন শ্যাস হামার। এখন থাকি আর চিন্তা নাই। ইসক্যাত বসি থাকি কামাই কইরমো। গাও গাইমব্যার নয় শরিলও হাফসিব্যার নয়। সারাদিন কামাই আর কামাই কইরমো। কি আনন্দ। আল্লাহ স্যারোক অনেক বড় কুরুক। ভূমিহীন হাফিজার রহমানও তাঁর শ্বশুড়বাড়িতে থাকেন। সংসারে ১ ছেলে, ৩ মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘এরা দুজনেই রিক্সা চালক। প্যাডেল চালিত তাঁদের রিক্সাদুটো জড়াজীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। তাদের কোনো অটোমেশন ছিলো না। শারীরিক কারণেও তারা রিক্সা টানতে পারছিলেন না। সে কারণে তাঁদের নুতন দুটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা দিলাম। যেন তাঁদের আয় ও সংস্থান বাড়ে। এবং বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁরা বাধ্য হয়ে পেশা না ছাড়ে। ব্যাক্তিগত অর্থায়নে দেয়া হলো। অটোরিক্সা দুটির দাম প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
যাযাদি/এস