অস্তিত্ব সংকটে উন্মুক্ত ধলেশ্বরী নদী, বিপাকে জেলে ও কৃষক

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫০

মন্তোষ চক্রবতী (অষ্টগ্রাম) কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের হাওড় বেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামের এক সময়ে উন্মক্ত স্রোতবহ ধলেশ্বরী নদীতে ভরাট হয়ে অসংখ্য চর পড়ে বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে। যেমন নেই নদীর উন্মুক্ততা তেমনি নেই নদীতে পানি, বর্তমানে নদীর পরির্বতে বোরো জমিন চাষাবাদ করলেও এই বিষয়ে নির্বিকার রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এলাকাবাসীররা জানান, একদিকে নদীর তীরবর্তী জেলেরা যারা এক সময় এই নদী উন্মুক্ত নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা এখন পাড় করছে চরম দুদিন অন্যদিকে নদীতে পানি না থাকার কারণে এই বছর প্রায় ৩ হাজার একর বোর ফসলি জমিন সেচের পানির অভাবে হুমকি মুখে পড়তে পারে বলে অভাবে এলাকাবাসীরা জানান। 

এছাড়াও এক সময়ের উন্মক্ত এই ধলেশ্বরী নদীটি ভরাটের ফলে মাঝেমধ্যে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌকাও আটকা পড়ে ভোগান্তির শিকার অসংখ্য সাধারণ মানুষ । 

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার থেকে প্রবাহিত মেঘনা হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা এবং হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম উপজেলা সীমান্তে এসে কালনী কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। এই মেঘনা নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার রাজাপুর, ডুবাজাইলের উত্তর দিকে বেকে কিশোরগঞ্জের বাজিত পুরের হুমায়ুনপুর হয়ে অষ্টগ্রামের ভাটিরনগর, দেওঘর, বাহাদুরপুর কাস্তুল হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে ধলেশ্বরী নাম ধারণ করে ইকুরদিয়া মেঘনা মিলিত হয়েছে।

এছাড়াও এক সময়ের গভীর এ নদীর বড় বড় বেশ কয়েকটি হাওরে বোরো উৎপাদনের সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে প্রচুর পরিমাণ ধান উৎপাদন  বেশ সুখেই দিনাদিপাত করত স্থানীয়  কৃষকেরা। এই নদী দিয়ে অষ্টগ্রাম থেকে ভৈরব বাজার, কুলিারচর যাত্রী লঞ্চ, যন্ত্রচালিত নৌকা, কার্গো ইত্যাদি চলাচল করতেন।  

এছাড়াও ভৈরব বাজার, আশুগঞ্জ ইত্যাদি নদী বন্দরে পণ্য সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে পলি পড়ে ধলেশ্বরী এই নদীতে মাটি ভরাট হয়ে নদীর নাব্যতা  হ্রাস পেতে থাকে। বর্তমানে অষ্টগ্রামের ভাটির নগরের উত্তরে মেঘনা ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থল থেকে জেগে উঠা চর হুমায়ুনপুর, কাস্তুল মসদিজাম পাশ দিয়ে সর্বশেষ অষ্টগ্রাম সদরের পৃর্ব দিকে ইকুরদিয়া পযন্ত প্রায় সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে নদীর সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও নদীতে কিছু লোকজন বোরো ধানের চাষাবাদ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো রকম নজরদারি বা  তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না বলে এলাকাবাসীরা জানান। 

নদীর পাড়ে জেলে ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, এই উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার কাজ করলে এই ধলেশ্বরী নদীটি নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে না পড়ায় নদীর পাড়ের জেলে, কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে । 

নদীর তীরবতী ও জেলে পল্লী দেওঘর ইউনিয়নের সদয় নগর, সদর ইউনিয়নের খোপারচর, বাংগালপাড়া ইউনিয়নের কুড়ের পাড় এলাকার অসংখ্য জেলেরা জানান, এই নদী থেকে মাছ ধরে তাদের পরিবার ও জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল  কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পলি পড়ে নদীটি মরে যাওয়ার কারণে আর মাছ ধরতে না পেরে জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প পেশা বেছে নিতে হচ্ছে। এমনকি অনেকই  জেলে পেশা ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে কাজের জন্য শহরের দিকে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন। 

তারা আরোও জানান, নদী সংরক্ষণের জন্য নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ড  আছে। কিন্ত এই নদী এই ভাবে ভরাট হয়ে মরে গেছে কিন্ত পানি উন্নয়ন বোডের কোন কার্যক্রম এমন কি তাদের কোনো লোকজন এই নদীটি দেখার জন্য এসেছিল বলে তো শুনেননি বলে একাধিক জেলেরা নদীটি দ্রুত খননের দাবি জানান। 

সূত্র জানান, এই উন্মুক্ত ধলেশ্বরী নদীটি বেশ কয়েক বছর আগে উপজেলার  ঐতিহ্যবাহী বাংগালপাড়া চৌদ্দ মাদল (একটি মেলা) থেকে এই নদীটি পাড় হতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছিল । 

এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম এ বিষয়ে পরিবেশবাদী ও হাওর অঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু বলেন, হাওরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ নিয়ে বিশদ গবেষণা হয়নি। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে প্রকৃতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে । অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন ও বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে চর জেগে উঠছে , নদীর তীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর প্রবাহ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিস্কৃয়তা ও দায়ীত্বহীনতা দেখা যাচ্ছে ।  তিনি দ্রুত  সময়ে মধ্যে পরিকল্পিত ভাবে এই নদী খননের দাবি জানান তিনি। 

এদিকে স্থানীয় সচেতন মহলের ভাষ্য,এক সময়ের স্রোতবহ এই ধলেশ্বরী নদীটি যদি দ্রত খনন করে সংরক্ষন না করা হয় তাহলে আগামী দিনে এই নদীর অস্তিত্ব খুজেঁ পাওয় মুশকিল হয়ে পড়বে। 

এই বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী মো: মতিউর রহমান এর সাথে বেশ কয়েক দিন তার মুঠোফোনে কল করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এসএম