শান্তিগঞ্জে মা মাছ সংগ্রহের মাধ্যমে উৎপাদন শুরু  

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:১৪

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জের একমাত্র শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স মৎস্য হ্যাচারিতে পোনা ও রেণু উৎপাদনে জেলাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  

মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়েও সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ১৯৯৬ সালে সরকার দ্বিতীয় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেণু উৎপন্ন করে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছড়িয়ে দিতে সুনামগঞ্জের সাবেক দক্ষিণ সুনামগঞ্জ বর্তমানে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে এ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। 

সুনামগঞ্জ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকায় ১৯৯৬ সালে ‘কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স’ স্থাপিত হয়। এখানে রেণু ও পোনা উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে।  

প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ একর ভূমির উপর গড়ে তোলা এ হ্যাচারি কমপ্লেক্স ১৩ একর জুড়ে ছোট-বড় ১৮টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া একটি হ্যাচারি বিল্ডিং, চারটি সার্কুলার ট্যাংক, পাঁচটি সিস্টার্ন ট্যাংক, একটি ডরমেটরি হাউস, একটি গুদাম, একটি অফিস ভবন ও একটি আবাসিক ভবন সহ মৎস্য ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে।

জানা গেছে, এখানে সব মিলিয়ে বর্তমানে ১৮টি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ আছে। এর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ছয়জন আছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন হ্যাচারি কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী ও চারজন ফিশারম্যান কাম গার্ড। বাকি ১১টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। মূল ফটকেও কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হ্যাচারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

জানা যায়, গত বছরে আকষ্মিক বন্যায় কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সের ১৮টি পুকুরের সবকটিই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সের প্রায় মা ও পোনা মাছ সহ প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্তমানে হ্যাচারিটিতে আর্থিক সাল অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪৫ কেজি রেণু ও ১০ লাখ পোনা মাছ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছ অর্থাৎ প্রায় ২০ লাখ টাকা।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে শান্তিগঞ্জ হ্যাচারিটিতে রেনু ও পোনা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে স্থানীয় ও বিদেশী জাতের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার,বিগ্রহেড, কালি বাউস,সরপুটি,গনিয়া সহ প্রায় ৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা মুল্যের  ১৫৭০ কেজি মা মাছ সংগ্রহ করা হয়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল, শান্তিগঞ্জ হ্যাচারী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. সুকুমার দাস, কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সুহাইল আহমদ, জামালগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা রাণী মোদক, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৌশিক সরকার, শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাক সাংগঠনিক সম্পাদক হোসাইন আহমদ, অর্থ সম্পাদক সোহেল তালুকদার প্রমুখ।

কার্প হ্যাচারি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, হাওর এলাকায় মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। বর্তমানে একটি লাভজনক পেশা। মাছ উৎপাদনে হাওর এলাকায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে আকষ্মিক বন্যায় শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সের প্রায় মা মাছ ও পোনা মাছ সহ প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর পোনা মাছ ও রেনু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৫৭০ কেজি মা মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে।  চলতি বছর ২৪৫ কেজি রেণু ও ১০ লাখ পোনা মাছ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছ অর্থাৎ প্রায় ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল বলেন, লোকবল সংকট শুধু হ্যাচারিতেই নয় পুরো জেলাতেই লোকবল সংকটে আমরা অফিস পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে মন্ত্রী, সচিব ও ডিজিকে লোকবল সংকট নিরসনের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে। আমাদের কাজ থেমে নেই। তবে লোকবল সংকটের কারণে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আশা করি কর্তৃপক্ষ মৎস্য খাতের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন করে লোকবল নিয়োগ দিয়ে সংকট নিরসন করবে। 
যাযাদি/ এম