বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে নারীকে মারধোর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৬জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনসহ তিনটি মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে এক নারীকে মারধোরসহ শ্লীলতাহানীর অভিযোগে সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূইয়াসহ ১৬জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনেসহ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সৈয়দা বদরুননেছা নামে এক নারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ ভূইয়াসহ তার ১৬জন লোকের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী সৈয়দা বদরুননেছা সুহিলপুর ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা মোঃ সারওয়ারের স্ত্রী। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূইয়াও একই গ্রামের বাসিন্দা। তারা সম্পর্কে আত্মীয়। সৈয়দা বদরুননেছা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশীদের চাচী।

সৈয়দা বদরুননেছা মঙ্গলবার দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা দায়েরের পরদিন বুধবার বিরোধপূর্ন জায়গায় আসামীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করেন। এর পরদিন বৃহস্পতিবার বদরুননেছার শ্বশুর সামছুল হুদা বাদী হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদুর রহমান জানান, আদালত দ্রুত বিচার আইনের ধারার মামলাসহ দুটি মামলা তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী সৈয়দা বদরুননেছা অভিযোগ করে বলেন, আবদুর রশিদ ভূঁইয়া সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য হওয়ায় তিনি খুবই প্রভাবশালী। পুলিশ চেয়ারম্যান ও তার লোকদের বিরুদ্ধে কোন কিছু না বলে উল্টো মামলার তাঁকে (বদরুননেছা) হয়রানী করছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দা বদরুননেছা সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের চাচা আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ নম্বর দলিলমূলে দেড় শতক এবং তাঁর স্বামী মোঃ সারওয়ার ১৩৩২৩ নম্বর দলিলমূলে ৫শতক জায়গা কিনেন। এরপর থেকে সাড়ে ছয় শতক জায়গা তাদের দখলে রয়েছে।

তাদের দখলে থাকা সাড়ে ছয় শতক জায়গার পেছনে ৫-৭ শতকের একটি জায়গা স্থানীয় কালু মিয়া গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের আগে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের চাচা রেনু ভূঁইয়ার কাছ থেকে কেনেন। ওই জায়গায় (পেছনের জায়গা) যাওয়ার কোন রাস্তা না থাকলেও বিক্রির সময় চেয়ারম্যানের আত্মীয় নির্ধারিত দাম থেকে দ্বিগুন মূল্য দেখিয়ে জায়গাটি দলিল করেন।

পেছনের ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য চাচা রেনু মিয়া ও স্থানীয় কালু মিয়ার পক্ষ হয়ে চেয়ারম্যানসহ তাঁর লোকজন গত কয়েক দিন ধরে বদরুনেছার জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। বদরুননেছা রাজী না হলে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন জোরপূর্বক বদরুননেছা ও তাঁর স্বামীর জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করবে হুমকি দেন। এতে বাঁধা দিলে তাদেরকে প্রাণে হত্যার হুমকিও দেন।

গত ৩০ জানুয়ারি সকাল আটটার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পক্ষের লোকজন দা, লাঠি, রড, কুড়াল, কোদাল ও শাবল নিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে বদরুননেছা ও তার স্বামীর জায়গার গাছপালা কাটতে শুরু করেন। আবদুর রশিদ দা দিয়ে মামলার সাক্ষী সামছুল হুদাকে কুপ দিতে এগিয়ে যায়। আসামী রুবেল ভূইয়া মামলার বাদী বদরুনেছাকে মাটিয়ে ফেলে টানা হেঁচড়া করে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শ্লীলতাহানি করেন। চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই মমিন ভূঁইয়া ও লিটন মিয়া বদরুনেছার আত্মীয় আরফা নাদিয়াকে মাটিতে ফেলে চুলে ধরে টানাহেঁচড়া করে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার, বদরুননেছা দুই হাতে থাকা দুই ভরি ওজনের স্বর্ণাংলকার ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন তাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বদরুননেছা নিরুপায় হয়ে সকাল সোয়া নয়টার দিকে ৯৯৯ ফোন করে সাহায্য চান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে নিবৃত করে।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী সৈয়দা বদরুননেছা বলেন, প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ও তার লোকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী। আদালতে মামলার করার পর উল্টো পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছি। টাকা দিয়ে জায়গা কিনে এখন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।

এ ব্যাপারে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূইয়া জানান, সেখানে তার পারিবারিক জায়গা রয়েছে। চাচা আনোয়ার হোসেন দুর-সম্পর্কের চাচী বদরুননেছার কাছে জায়গা বিক্রি করেন। আরেক চাচা রেনু ভূইয়া স্থানীয় কালুর কাছে জায়গা বিক্রি করে। ২০০৭ সালে আমাদের একটি পারিবারিক বন্টননামা করা হয়। সেখানে পেছনের জায়গায় যেতে তিন ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি রাস্তার বিষয় উল্লেখ করা হয়। ঘটনার দিন কয়েকজন গিয়ে গাছপালা কেটে ফেলে। সেসময় টানাহেঁচড়া হয়ে থাকতে পারে। তবে আমি দেখিনি। জানতে পেরে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটিতে একটি দা পড়ে থাকতে দেখি। দূর্ঘটনা এড়াতে আমি দা-টি হাতে নেই।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, মামলাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুুলিশ বাদীপক্ষকে কোনো ধরণের হয়রানি করেনি। বাদীর অভিযোগ সত্য না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে