লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি: মাহি

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৪

গাজীপুর প্রতিনিধি

শনিবার রাতে জামিনে কারামুক্ত হয়ে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় তাদের ফারিশতা রেস্টুরেন্টের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। এসময় তিনি বলেন, আমি লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি। একজন পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করে। তাই আমার লাইভে বলাতে পুরো বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছে হয়তো। 

আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি যে দেড় কোটি টাকার কথা বলেছি সেটা অবশ্যই তদন্ত হবে। আমি ন্যায় বিচারের জন্য সবার কাছে যাবে। আমি অন্যায় করে থাকলে আমি শান্তি মাথা পেতে নিব। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রায় ঘন্টা ব্যাপি সাংবাদিক সম্মেলন করেন মাহি। এসময় তার এক মামা ও আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। 

মাহিয়া বলেন, আমাকে যখন প্লেন থেকে নিয়ে আসলো ইমিগ্রেশন পুলিশ আমার সাথে কাউকে কথা বলতে দিল না, আমার মামাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি যখন রাস্তা দিয়ে আসছি, গাজীপুরের পুলিশ তারা ওয়্যারলেসে কথা পর্যন্ত বলছিল না। কারণ ওয়্যারলেসে কথা বললে যদি অন্যেরা আমার লোকেশন পেয়ে যায়।
 
আমি কি এত বড় আসামী হয়ে গেছি? আমি তো এত বড় আসামী না। আমি লাইভে একজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, সে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছে, আমি সেটার আসামী। কিন্তু আমি তো কোন রাষ্ট্রদ্রোহী না। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি মাত্র। 

আমি সবকিছু নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত্র। আমি মাহিয়া মাহি একটা পরিচিত মুখ হওয়ার পরও আমার সাথে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি বার বার বলছিলাম প্রচন্ড গরম লাগছে, আমার শ^াসকস্ট হচ্ছে, আমি ঠান্ডা পানি চাচ্ছিলাম, পুলিশ আমাকে এক ঘন্টা পরে পানি দিয়েছে। এতো কিসের গোপনীয়তা? আমি তো এরকম কোন আসামী না। আমি মাহী হয়েও আজকে আমার সাথে যা হয়েছে আমি নয় মাসের প্যাগনেন্ট হওয়ার পর আমি যে মানবিকতা পাইনি, আমার স্বামী বিরুদ্ধেও এ মামলা আছে। আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমাকে যখন কোর্টে নেয়া হয়েছে। কোর্টে নেয়ার পরে জাজ তো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার কিছুই করেননি। 

আমি আগেই বলেছি, আপনি যখন সর্বোচ্চ অসহায় থাকবেন, আপনার জায়গা জমি নিয়ে একজন চলে যাচ্ছেন। আপনি এটা নিয়ে বহুদিন ধরে লড়াই করতেছেন, যখন আপনি এটার কোন ন্যায় বিচার পাবেন না। তখন আপনি কি করবেন? আপনি কাকে বিচার দিবেন, আমি বিচার পাই নাই। আমি একমাস ধরে ঘুরতেছি। একমাস ধরে সব জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি অভিযোগ করার পর সে (পুলিশ) আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে। সে বেপরোয়া হয়ে নয় মাসের প্র্যাগনেন্ট একটা মহিলাকে সেই এয়ারপোর্ট থেকে মনে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ধরে নিয়ে আসছে। একটা ঠান্ডা পানি দেয়ার জন্য এক ঘন্টা লাগছে এবং আমি শ্বাসকস্টের রোগী বলছি। আমার শ্বাসকস্ট হচ্ছে, তারা এটার কোন তোয়াক্কা করে নাই। আমাকে সেইভাবে ট্রিট করা হয়েছে। তাহলে বুঝেন এই লোকটা (পুলিশ কমিশনার) কতটুকু বেপরোয়া হয়ে গেছেন। 

এর বিরুদ্ধে আমি কি করবো? যখন দেখতেছি আমার জায়গা নিয়ে চলে যাচ্ছে একজন লোক, তখন আমি দেশে নাই, দেশে থাকলে আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারতাম, সামনে গিয়ে আমি ফাইট করতে পারতাম। তখন হয়তো ফাইট-মাইট করে মামলা হতো। সেটা তো করার সুযোগ নাই। তখন আমি কি করবো, লাইভে না যেয়ে আমি কি করবো। আমি লাইভে যাওয়ার আগে আমি বারবার কমিশনারকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমার কোন কথা আমলে নেননি। 

পুলিশ জমি দখলের কথা বলে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার ঘুষ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা আপনি আসলে আপনি নিজে উপলদ্ধি করবেন আপনি নিজে জানবেন। কিন্তু এসব বিষয়ে অনেক সময় আলামত থাকে না। আমি সামান্য জিডি করতে পারি নাই। জিডি করতে যখন গেছি তখন আমাকে থানা থেকে বলা হয়েছে ডিসি’র কাছে পারমিশন নিতে হবে। আমি যদি জিডি করতে না পারি, আপনি গিয়ে কিভাবে তা পারবেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে অনেকদিন ধরে কমিশনারের নির্দেশে যখন আমার স্বামীর অন্যান্য জায়গা জমি ইনকুয়ারি করতেছে পুলিশ তো জায়গা জমি নিয়ে ইনকুয়ারি করার কথা নয়। পুলিশ জায়গা জমির কাগজ নেয়ার কথা নয়, কিন্তু সে বারবার জায়গার কাগজ নিয়ে ডাকতেছে, সে কাগজ দেখবে। জমি-জমার বিষয়ে কাগজপত্র দেখবে আদালত। 

মাহি বলেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে কথা বলবো, তার কাছে আমার আইজীবীরা যাবেন, কথা বলবেন। তারাই ওই টাকার সত্যতা বের করবেন। আমি লাইভে টাকা নেয়ার কথা বলে ভুল করেছি। যেহেতু পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করে। আমার লাইভে তার টাকা নেয়ার কথা বলাটা পুরো বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছে হয়তো। আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু আমি যে কথাটা বলেছি, দেড় কোটি টাকার কথাটা বলেছি. সেটা নিয়েও তদন্ত হউক, নিশ্চয়ই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি হচ্ছেন ন্যায় বিচারের পক্ষে, সে যেই হোকনা কেন, কমিশনার হোক, আর যেই হোক না কেন। আমি যদি অন্যায় করে থাকি আমাকে শাস্তি দিবে, আমি সেই শাস্তি মাথা পেতে নেবো। আমি যেটা বলেছি, লাইভে গিয়ে ওইসব কথা বলে ভুল করেছি। আমি সেটার জন্য দেশবাসীর কাছে সরি।

দেড় কোটি টাকার বিষয়টি প্রমাণ করা হবে কিনা?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহি বলেন, যখন দখল সংক্রান্ত বিষয়ে আমি জিডি করাচ্ছিলাম, পুলিশ সেই জিডি নেয় নাই। সেদিনই কিন্তু পতিপক্ষের ইসমাইল হোসেন লাদেনদের ওই জমি দখল করার কথা ছিল। সেটি বুঝতে পেরেই আমি জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমার জিডি নেয়নি। অনেক চাপাচাপির পর সিল না মেরেই আমাকে একটি ফেক জিডির কপি ধরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। সেদিন কিন্তু পুলিশকে টাকা দেয়ার কথা প্রতিপক্ষের ইসমাইল হোসেন লাদেনই বলছেন। জিডি যেদিন হয় আমি যেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী যখন কমিশনারকে বলছেন, আপনি কেন জায়গা-জমির মধ্যে যাবেন। রকিব সরকারের জায়গা যদি না হয়ে থাকে এটা কোর্টের মাধ্যমে ফয়সালা হবে। তাহলে এরকম কেন হচ্ছে। তখন কমিশনার সাহেব আরও ক্ষেপে গেছেন। 

মাহি বলেন, আমার কথা হচ্ছে আমি খুবই আতঙ্ককিত। যেমন হচ্ছে আমার জিডিতে যা লেখা ছিল, যেমন একটা গ্রæপ গিয়ে জায়গা দখল করে নিবে এবং ওই সময় পুলিশ আমাদের সাহায্য করবে না, পুলিশ সাথে সাথে যাবে না। আমাদের সনিরাজ দখল হয়ে যাবে। আমার জিডির ভাষা অনুযায়ী কিন্তু সেই কাজটিই হয়েছে। আমাকে আজকে যেভাবে পুলিশ ট্রিট করেছে, আমার স্বামী দেশে ফিরলে বিরুদ্ধে আরও মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আরও টর্চার করবে। আমাদের পুরো সরকার পরিবারকে এই কমিশনার বিতর্কিত করবে। সবার মাধ্যমে আমি তা বলতে চাই। আমার স্বামী আসার পর তাকে যেন টর্চার না করা হয়, ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমাদের লোকজনকে প্রচন্ড হয়রানি করা হচ্ছে, ৯ জনকে জেলে দেখে আসছি।  আমাদের লোকজনকে যেন হয়রানি না করা হয়।  

যাযাদি/ এসএম