শুকিয়ে গেছে গড়াই নদীর পানি !

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৯

সোহেল মিয়া, রাজবাড়ী

যে নদীর বুক চিরে বারো মাস চলত নৌকা সেই নদী এখন পানি শূণ্য। নৌকা তো দূরের কথা নদীটিই যেন এখন তার অস্তিত্ব রক্ষায় সংকটে পড়েছে। ইতিহাসের পাতা থেকে বিলীন হতে চলেছে নদীটি। বলছিলাম রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির ওপর দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের বহমান প্রমত্তা গড়াই নদীর কথা। দিনদিন নদীটি এখন বিলীন হতে চলেছে। গড়াই এখন মৃত প্রায়।


সময়ের সাথে সাথে কেন নদীটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে জানা যায়, বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব, প্রতিবেশি দেশ ভারতের ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক পানি বন্টন নীতিমালা না মানা, স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীটি তার অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। শুধু গড়াই নদীই নয়। বালিয়াকান্দির ওপর দিয়ে বয়ে চলা চন্দনা, চত্রা, হড়াই ও পুষস্বলী নদীগুলোও আজ পানি শূণ্যতায় ভুগছে।

ফারাক্কার হিংস্র ছোবলের কারণে দিনেদিনে এ সব নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে এখন ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। আগামি প্রজন্মের কাছে নদীগুলো শুধু রুপকথার মতোই মনে হবে। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করার পর থেকে এ অবস্থার শুরু হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমেও পানি সংকটে ভোগে নদীগুলো। বছরের ১২ মাসের মধ্যে কোন রকম ২-৩ মাস পানি থাকলেও বাকি ৯ মাস একেবারেই শূণ্য। শুধু বালু আর বালু। নদীতে পানি থাকায় এ অঞ্চলের পরিবেশ হুমকিতে রয়েছে এবং কৃষক ও জেলেদেন জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে আমূল পরিবর্তন।

বুধবার (১৫ মার্চ) সরেজমিন বালিয়াকান্দির নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াই নদীতে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই নদীতে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে কোথাও পানি, কোথাও বালুচর। গড়াই নদীটা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর মাঝখান দিয়ে সরু খালের মধ্যে দিয়ে কোন রকম পানি রয়েছে। আর সম্পূর্ণ নদীর বুক চিরে বালুচর। সেই বালুচরের মধ্যে দিয়েই মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। 

নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারিদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে মরণবাঁধ ফারাক্কা। ফারাক্কা বাঁধের বিরুপ প্রভাব এসে পড়েছে পদ্মা নদীতে। আর এ জন্য গড়াই নদীসহ চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদীকে পানি থাকেনা। কারণ সকল নদীর উৎসমুখ পদ্মা।

এ সময় তারা আরো বলেন, এ সব নদীগুলো ৯-১০ মাস পানি শূণ্য থাকায় এ অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বর্ষাকালে এ সব নদীতে কিছু দিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছরই পানি শূণ্য থাকে। আর এ সুযোগে প্রভাবশালী দখলদাররা নদীর দু’পাশ দখল করে নিয়েছে।

জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কল্লোল বসু বলেন, আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন নীতিমালা সঠিক ভাবে প্রয়োগ না করা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবেই নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলোকে পুন:জীবিত করা খুবই জরুরী। নদীগুলো বাঁচলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক বাঁচবে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসান বলেন, শুধু নদী দখল নয়, যে কোন সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত রাখতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। জেগে ওঠা নদীর দু’পাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নদীগুলো যাতে দখল না হতে পারে সে জন্য আমরা সজাগ রয়েছি।

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, আপনারা দেখেছেন বর্তমান সরকার মৃত নদীগুলোকে পুন:জীবিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে চন্দনা নদীটি পুন:খনন করা হয়েছে। গড়াই নদীর খনন কাজটি কুষ্টিয়াতে হয়েছে। আশা করছি এদিকে খনন কাজ শুরু করলে নদীগুলো আবার প্রাণ ফিরে পাবে। উপকৃত হবে এ অঞ্চলের কৃষক।

যাযাদি/ এসএম