বাউফলে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় দুই শিক্ষার্খী খুন

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৭:৪৯

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর বাউফলে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মো. মারুফ হোসেন(১৫) ও মো. নাফিস মোস্তফা আনছারী নামে দুই শিক্ষার্খী খুন হয়েছে। 

নিহতরা সূর্য্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্র। হামলাকারীরা একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্র। বুধবার বিকালে ইন্দ্রকুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ওই গ্রামে আয়োজিত একটি মাহফিলে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে  ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম, মারুফ ও নাফিসের সঙ্গে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রায়হান কাজী, হাসিবুল কাজী, সৈকত, মশিউর রহমান (নাইম) এর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। 

এ ঘটনার জের ধরে নবম শ্রেণীর রায়হান, নাঈম ও হাসিবুলসহ  কয়েক শিক্ষার্থী বুধবার বিকালে বিদ্যালয় ছুটির পর সিয়াম, মারুফ ও নাফিসকে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পাঙ্গাশিয়া ব্রিজের উপরে ডেকে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে নবম শ্রেনির ওই শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে করে নাফিসের পায়ে পা দিয়ে আঘাত করে ঝগড়ার সৃষ্টি করে। 

এক পর্যায়ে হাসিবুল ছুরিকাঘাত করে নাফিসকে গুরুতর জখম করে। নাফিসকে বাঁচাতে মারুফ ও সিয়াম এগিয়ে আসলে তাদেরকেও ছুরিকাঘাত করে ওই শিক্ষার্থী নামে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। 

পরে স্থানীয়রা আহত তিনজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাফিস ও মারুফকে বরিশাল শেরে ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। 

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাত ৭ টার দিকে দুইজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত মারুফ ইন্দ্রকুল গ্রামের মো. বাবুল হওলাদারের ও নাফিস  পশ্চিম ইন্দ্রকুল গ্রামের মো. মিরাজ আনছারীর ছেলে।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় নিহত মারুফের মা আছমা বেগম । তিনি বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন আর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ভাত খাইয়ে দিয়েছি। ছেলে বলেছে মা আমি যাই। এরপর আমি আগের মতই বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ছেলের জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু মারুফ আর আসে না। 

এরই মধ্যে আমার দেবর সম্পর্কের ছোট ভাই আরাফাত আমাকে বলে ভাবী মারুফকে কারা যেন ছুরিকাঘাত করেছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আমি যেতে না যেতেই স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছে। এরপর বরিশাল নিয়ে গেছে। আমি আমার ছেলে এখন পর্যন্ত দেখতে পারি নাই। 

এ সময়ে তিনি আরো বলেন, ওরা আমার ছেলের একটা হাত ভেঙ্গে দিতো,পা ভেঙ্গে দিতো। একেবারে দুনিয়া ছাড়া করে দিয়েছে কেন? আমার সুস্থ ছেলে স্কুলে গিয়ে আর ফিরে এলোনা। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। 

নিহত নাফিসের মামা সার্ভেয়ার কোরবান আলী বলেন, খুন হওয়ার পর ১৬ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারে নাই। 

আসামী গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও হত্যাকারীরা যাতে ওই স্কুলে আর লেখাপড়ার সুযোগ না পায় সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

ওই বিদ্যালয়ের নিহতদের সহপাঠী দশম শ্রেনির ছাত্র রিয়াদুল ইসলাম ও মো.তাইবুর রহমান বলেন, মারুফ ও নাফিস দু’জনেই মেধাবী ছাত্র ছিল। শ্রেনি কক্ষে পড়াশুনায় মনোযোগী ছিল।আচার আচারণ অনেক ভাল ছিল। কোনদিন কারো সাথে বেয়াদবি করতে দেখি নাই। সহপাঠীদের হারিয়ে আমরা শোকাহত।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমি ইন্দ্রকুল বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময়ে হাসিবুলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন হাসিবুল বলেন , মারুফ ও নাফিসকে মেরে এসেছি। 

তখন আমি বুঝতে পারিনি এভাবে ছুরিকাঘাত করেছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষন অফিসার গোলাম কিবরিয়া বলেন, হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এছাড়া বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিনদিনের শোক পালনের কর্মসুচী, কালোব্যাজ ধারণ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের মেধাবী দুই শিক্ষার্থীকে এভাবে হারাতে হবে কখনোই চিন্তাও করিনি। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে ভবিষ্যতে এরকম কোন ঘটনা আর না ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, হামলাকারীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তারা প্রায়ই এলাকায় মারামারি ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এলাকাবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের নেশার সাথেও জড়িত।
আজ বৃহস্পতিবার বাদ আছর পশ্চিম ইন্দ্রকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নাফিসের এবং ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মারুফের নামাজে জানাযা শেষে নাফিসকে তার মামা বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে এবং মারুফকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আল মামুন বলেন, হত্যাকারীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযানে রয়েছে পুলিশ। যেভাবেই হোক হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। 
যাযাদি/ এমৃ