শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
৬ নং সেক্টরের প্রথম শহীদ

ফুুলবাড়ীতে শহীদ লুৎফর রহমানের ৫১ তম শাহাদতবার্ষিকী পালন হবে কাল

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  ২৭ মার্চ ২০২৩, ২০:০২

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের প্রথম শহীদ লুৎফর রহমান ছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা। এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার ৫১ তম শাহাদত বার্ষিকী ২৮ মার্চ আজ।

তার শাহাদত বার্ষিকী প্রতিবছরের মতো এবারও পালন করতে যাচ্ছে ফুলবাড়ী সাহিত্য পরিষদ ও স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনের সাংবাদিকরা।

২৮ মার্চ এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার ৫১ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচীতে থাকছে দুপুরে ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে থাকা শহীদ লুৎফর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, যোহরের নামাজ শেষে তার কবরের পাশে সুরা ফাতিহা পাঠ ও দোয়া, সন্ধ্যায় ফুলবাড়ী সাহিত্য

পরিষদ-এর অস্থায়ী কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল।

এতে উপস্থিত থাকবেন শহীদ লুৎফর রহমানের সাথী মুক্তিযোদ্ধারা, ফুলবাড়ী সাহিত্য পরিষদ-এর লেখক কবিরা ও স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনের সাংবাদিকরাসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। ইতোমধ্যে ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে থাকা শহীদ লুৎফর রহমানের কবরটি ধোঁয়া মোছার কাজ শুরু হয়েছে।

সোমবার শহীদ লুৎফর রহমানের কবরটি ধোঁয়া মোছার কাজ করেন ফুলবাড়ী উপজেলার সাদামনের মানুষ শ্রমিক মনছুর আলী। তিনি জানান, এই লোকটা দেশটাপ স্বাধীন করার জন্য পাক সেনাদের গুলিতে মারা গেছেন। তার জন্য আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।

মনছুর আলী জানান, আমি শহীদ লুৎফর রহমানের কবরটি নিয়মিত ধোঁয়া মোছার কাজ করে যাবো। তাকে মহŸত করে যতদিন আমি বাঁচি থাকবো ততদিন শহীদ লুৎফর রহমানের কবরটি ধোঁয়া মোছার কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, মহান স্বাধিনতার ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধে বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সারা দেশের মতো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী এলাকার দেশ প্রেমিক বাঙালিরা সোচ্চার হতে থাকে। ১৯৭১ এর ২৮ মার্চ ভূরুঙ্গামারীর জয়মনি থেকে আসা একদল পাক হানাদার ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে।

এ ঘটনাটি জানতে পেরে গংগারহাট বিওপির ইপিআর সদস্য পদে কর্মরত থাকা লুৎফর রহমান ও ফুলবাড়ীর কৃতি সন্তান সাহসী পুরুষ মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক বীর প্রতীক মরহুম বদরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল খান সেনাদের পরাস্ত্র করার জন্য তাদের পিছু নেয়।

খান সেনাদের লক্ষ করে মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ারিং পজিশন নিতে গেলে রাস্তায় সাধারণ মানুষের কারণে গুলি করতে পারেনি। পরে ফুলবাড়ী থেকে ধরলা নদীর কুলাঘাট পার হয়ে লালমনিরহাট সদরের নেছারিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় পাক খান সেনার দলটি পৌঁছিলে সেখানেই পজিশন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ শুরু করেন।

লালমনিরহাট নেছারিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে সাথী মুক্তি যোদ্ধাদের কাছ থেকে গুলি চাওয়ার জন্য মাথা উঁচু করলে পাক হানাদারের ছোঁড়া একটি গুলি তার মাথা ভেদ করে। সেখানেই শহীদ হন লুৎফর রহমান।

এই যুদ্ধটিই ৬ নং সেক্টরের প্রথম যুদ্ধ বলে জানিয়েছিলেন ফুলবাড়ীর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সম্মুখ যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বীর প্রতীক মরহুম বদরুজ্জামান মিয়া। এই ৬ নং সেক্টরের প্রথম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন শহীদ লুৎফর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে ৬ নং সেক্টরের অধিনস্থ ফুলবাড়ীর মুক্তি যোদ্ধারা দুর্বার হয়ে ওঠেন। ধ্বংস করেন পাক হানাদারের ঘাঁটি। ফুলবাড়ীকে রাখেন শত্রু মুক্ত। শহিদ লুৎফর রহমানের নামে ফুলবাড়ী সদর থেকে ফুলসাগর পর্যন্ত একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে শহীদ লুৎফর রহমান সরণি।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই শহীদ বীর মুক্তি যোদ্ধাকে উপজেরা প্রশাসনসহ ফুলবাড়ীবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন ও কবর জিয়ারত করে আসছে।

ফুলবাড়ী সাহিত্য পরিষদ ও স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনের সাংবাদিকরা প্রতিবছর ২৮ মার্চ শাহীদ লুৎফর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী পালন করে আসছেন।

প্রথমদিকে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লুৎফর রহমানের পারিবারিক ঠিকানা ও তার পরিবার বর্গের খোঁজ অদৃশ্য ছিল। তার ঠিকানা ও পারিবারিক খোঁজ পাওয়ার জন্য সাংবাদিক ইউনুছ আলী আনন্দ প্রেরিত দাবি সংবিলত একটি স্মারকলিপি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালায়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানা থেকে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের পারিবারিক ঠিকানা ও পরিবার বর্গের খোঁজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এতে দীর্ঘদিন পরে শহীদ লুৎফর রহমানের পারিবারিক ঠিকানা মেলে।

পিলখানা থেকে পাওয়া তথ্য ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহিদ লুৎফর রহমানের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনইমুড়ি উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বজরা গ্রামে। এখানে শহীদ লুৎফর রহমানের স্ত্রী আমেনা বেগম (৮০), তার একমাত্র ছেলে সৌদি প্রবাসী মতিউর রহমান, নাতী মিতুল ও সিতুল, বিবাহিত নাতনী মোহিনী ও মিতিলাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বসবাস করছেন।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে