মহম্মদপুরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ষঢ়যন্ত্র ফাস!

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ২০:০৫

মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি

মাগুরার মহম্মদপুরে পলাশবাড়ীয় ইউনিয়নের চরকালিশংকরপুর গ্রামের আলোচিত আরিফুল মোল্যা (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার তিনদিন পর আসামীপক্ষ চাঞ্চল্যকর এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এবং হত্যা মামলা থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে ও বাদিপক্ষকে চাপে ফেলতে নিজ পক্ষের এক গৃহবধূকে (৩৮) পরিকল্পিতভাবে নিয়ে এসে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের আকিদুল ইসলাম ওরফে আকির নামের এক মেম্বারের বিরুদ্ধে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের চরকালিশংকরপুর গ্রামে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে গত ১৬ মার্চ সকালে আরিফুল মোল্যাকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় নিহত আরিফুলের বড় ভাই কোবাদ মোল্যা বাদি হয়ে গত ১৮ মার্চ মহম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামকে এক নম্বর এবং একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আকিদুল ইসলাম ওরফে আকিরকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এই মামলা থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে এবং বাদিপক্ষকে চাপে ফেলতে ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত হন আসামী পক্ষ। তারা নিজেদের পক্ষের এক গৃহবধূকে (৩৮) পরিকল্পিতভাবে নিয়ে এসে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ ওঠে। পরিবর্তীতে পরিকল্পিত ষঢ়যন্ত্রের সব ঘটনা ফাস হয়ে যায়।

সূত্রমতে, গত ১৯ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার আটকবানা গ্রামের একটি মাঠে ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। গত ২২ মার্চ ধর্ষণ ও সহযোগিতার অভিযোগে আলফাযাঙ্গা থানায় মামলা করেন তিনি। ওই গৃহবধূর বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা কালিশংকরপুর গ্রামে। তবে ঘটনাস্থল আলফাডাঙ্গা এলাকার মধ্যে হওয়ায় তাঁকে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে হয়েছে।

মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলার দক্ষিণ চরনারানদীয়া গ্রামের আতর আলী গাজী (৫৫), ধুলঝুড়ি গ্রামের কাবুল শেখ (২২) ও খালিদ মোশারফ রঞ্জু (৫০) এবং মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের কালিশংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আকিদুল ইসলাম ওরফে আকির (৩৫) ও একই গ্রামের নান্নু মিয়া (৪৫)। তাঁদের মধ্যে আতর আলী গাজীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ মার্চ মহম্মদপুর উপজেলার চর কালিশংকরপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজন আরিফুল মোল্যা (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে। আরিফুল ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলামের প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোক ছিলেন।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ইউপি সদস্য পক্ষীয় এক ব্যক্তির স্ত্রী। খুনের ঘটনার পর বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ভয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাবার বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলায় চলে যান তিনি।

গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কল করে জরুরী কাজের কথা বলে মোটরসাইকেল পাঠিয়ে তাঁকে আলফাডাঙ্গা থানার আটকবানা গ্রামে নিয়ে যান ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলামের পাঠানো লোক কাবুল শেখ। সেখানে পৌছানোর পর ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন আতর আলী গাজী। পরে ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলাম ওরফে আকিরসহ অন্যরা ওই গৃহবধূকে তাঁর স্বামীর বাড়ির কাছে নিয়ে যান। এরপর ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলাম ওরফে আকির প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করার জন্য ওই গৃহবধূকে চাপ দেন। মামলা না করলে তাঁর স্বামীকে আরিফুল হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত রায় বলেন, ‘ঘটনাস্থল ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার মধ্যে হওয়ায় আমরা ওই গৃহবধূকে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেই।

আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, একটি খুনের মামলার বাদিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২২ মার্চ মূল অভিযুক্ত আতর আলী গাজীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।


যাযাদি/এসএস