কালিয়ায় ‘বীরত্বগাঁথা’ শুনে আপ্লুত হলো শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৩, ২০:১৬

কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি

স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সন্তানদের কাছে রনাঙ্গনের বীরত্বগাঁথা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়েছেন কালিয়ার শতাধিক শিক্ষার্থীসহ অতিথিরা।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের উদ্যোগে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করনের লক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালিন ‘বীরত্বগাঁথা’ শুনানি বিষয়ক অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে রনাঙ্গনের বীরত্বগাঁথা শুনান ৭১’র রনাঙ্গনের স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। 

সব শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযােগিতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে  ইউএনও রুনু সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের অতিথিদের উপস্থিতিতে প্রধান অতিথি ছিলেন, জামুকার যুগ্ম সচিব শাহ আলম সরকার, বিশেষ অতিথি ছিলেন নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসানসহ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. নূরুল আমিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ, সহকারি কমিশনার  (ভূমি) আফরিন জাহান ও কালিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মশিউল হক মিটু প্রমূখ। 

পূর্ব নির্ধারিত তালিকাভুক্ত ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বগাঁথায় অংশ নেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আসাব হোসেন রনাঙ্গনের বীরত্বগাঁথা নিয়ে পাক হানাদারদের সাথে জীবনবাজি রেখে সম্মূখ সমরের বিস্তারিত বিবরন তুলে ধরলে শ্রোতাদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ ও আহত হওয়া এবং তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া ও পাক হানাদরদের হত্যাসহ আটকের বিষয়ে তিনি লোমহর্ষক বর্ননাও দেন। যা উপস্থিত দর্শক শ্রোতাকে আপ্লুত করে তোলে। বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএম একরামুল হক টুকু দুইদিন অনাহারে থেকে কালিয়াকে হানাদার মুক্ত করার সম্মুখ যুদ্ধের কঠিন ত্যাগের বর্ননা দিয়ে সহযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে নিজেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম দেশের জন্য লড়াই করতে যুদ্ধের প্রশিক্ষন নিতে ভারতে যেতে বহু বাধা অতিক্রমের বর্ননাসহ ভারতে যাওয়ার পথে শহীদ বুদ্ধিজীবি শেখ আব্দুস সালামের শহীদ হওয়ার করুন কথা তুলে ধরলে উপস্থিত সকলের চোখ ভিজে আসে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে শহীদ আব্দুস সালামের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা অতিসম্প্রতি জাতীয় করন করা হয়েছে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান তার পুরনো দিনের কথা শুনাতে গিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পর পাক হানাদাররা তার গ্রাম উপজেলার নয়নপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ একটি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীর আর্ত চিৎকার শুনা ছাড়া তার কিছুই করার ছিলনা। তাই দেশের মুক্তি ও মা বোনের ইজ্জত রক্ষার জন্য তিনি ভারতে প্রশিক্ষন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার কাহিনী তুলে ধরেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সম্মুখ যুদ্ধে পাক হানাদদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছুহটা ও জীবন নিয়ে নিরাপদে সরে যাওয়ার এক লোমহর্ষক কাহিনী তুলে ধরেন। তবুও তারা যুদ্ধের মাঠ ত্যাগ করেননি বলে জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন আবেগি কন্ঠে রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের ৯  মাসের দূর্বিসহ দিনগুলোর বর্ননা তুলে ধরেন। শত সমস্যার মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করতে জীবনবাজি রেখে কিভাবে এগিয়েছেন  তারও একটি করুন কাহিনী তুলে ধরেন। 

এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হলে সরকারি কালিয়া শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রী করেজের শিক্ষার্থী তানবীর হাসান ইমাম ও সজীব মোল্যাসহ অনেকেরই প্রশ্নের জবাব দেন মুক্তিযোদ্ধারা। সবশেষে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজের ১০টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাতা ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রধান অতিথিসহ অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

যাযাদি/ এসএম