হোসেনপুরে ছুরি-চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত কামাররা

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২৩, ১০:০৭

হোসেনপুর প্রতিনিধি

কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার কামাররা। চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন মাংসকাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। প্রতি বছরই কুরবানির ঈদ এলে এদের কদর বেড়ে যায়। যার ফলে কামারদের দোকানে এখন ভিড় করছেন হাজারো ক্রেতা। এ সুযোগে কামাররাও দাম হাকছেন তাদের নিজেদের ইচ্ছে মতো।

জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলায় কামারদের দোকানের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। কুরবানির পশু কেনার আগেই ছুরি-চাপাতি কেনার জন্য কামারের দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড়। আবার অনেকে পুরোনো ছুরি-চাপাতি নিয়েও কামারের দোকানে ভিড় করছেন সেগুলো চকচকে ও ধারালো করার জন্য। দোকানিরা পশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত নানা ধরনের ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি ও চায়নিজ কুড়াল সাজিয়ে রেখেছেন দোকানে। আবার প্রতি বাজারে বাজারে বসে ভাসমান দোকান। এসব কামারদের দোকানে ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে ছুরি-চাপাতি তৈরি ও বিক্রির ধুম।

হোসেনপুর উপজেলা মধ্য আড়াইবাড়ীয়ার কয়েক জন কামার জানান, বাপ-দাদার পেশাকে ১২ বছর বয়স থেকে এ দা, বটি, ছুরি-চাপাতি তৈরি ও বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছি। সারা বছর যে পরিমান ছুরি-চাপাতি বিক্রি হয়, তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বিক্রি হয় এ কোরবানির ঈদে। আমাদের বিক্রিবাট্রা নির্ভর করে কুরবানির পশুর সংখ্যার ওপর। যত বেশি কোরবানি হবে, তত বেশি ছুরি-চাকু বিক্রি হয়।

ছুরি-চাপাতি বিক্রেতা হরিপদ মনিদাস জানান, তার দোকানে ৪ জন কর্মচারী রয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জন মালামাল তৈরি করে এবং দুজন বিক্রির কাজে নিয়োজিত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখন তাদের ব্যস্ততা।

গোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ সিরাজ উদ্দিন গোবিন্দপুর বাজারে এসেছেন ছুরি কিনতে। তিনি জানান, ঈদের আর বাকি মাত্র দুই দিন,গত বছরের পুরোনো চাপাতিতে মরিচা পড়ে গেছে। সেটা দুই দিন আগেই কামারের দোকান থেকে ঝালিয়ে নেওয়া হয়েছে। ছোট একটা ছুরির প্রয়োজন হওয়ায় তা কিনতে এসেছি।

হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন কামারের দোকান ঘুরে জানা গেছে, দেড় থেকে আড়াই কেজি ওজনেরও চাপাতি রয়েছে। ভালো মানের একটি চাপাতি তৈরিতে দাম পড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। জবাই করার কাজে ব্যবহারিত একটি ছুরির দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, ছোট একটি ছুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, সাইড ছুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাপাতি ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, দা ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, কুড়াল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় দা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় কামারশালায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার ধনকুরা এলাকার কামার চয়ন কর্মকার বলেন , কয়লার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এরই সঙ্গে বেড়েছে দা-বটি বানানোর লোহা আর ইস্পাতের দাম। ফলে এখন কাজ করে আগের মতো লাভ হচ্ছে না। হোটেল বা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার হয় তাই কয়লা পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, ইটের ভাটাগুলোতেও গ্যাস এবং কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। আগে কাঠ বা খড়ি দিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো হতো। কয়লার কোন সমস্যা ছিল না। এখন গ্যাস ব্যবহার করার কারনে কয়লা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।ঈদে কোরবানির পশুর মাংস প্রস্তুত করতে যদিও যন্ত্রপাতির দাম বেশি কিন্তু কেউ বসে নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে কেউ কৃপণতা দেখায়নি। শত মানুষের ভীর এখন কামারশালায়।


যাযাদি/ এস